প্রোক্যারিওটিক কোষের পরমাণু গঠন

 

প্রোক্যারিওটিক কোশের পরাণু গঠন (Ultra Structure of Prokaryotic cell):

 

ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃশ্যমান একটি প্রোক্যারিওটিক কোশ তথা আদি কোশের বিভিন্ন অংশগুলি নিম্নরূপ-

 

1. ক্যাপস্যুল বা স্নাইম স্তর (Capsule or Slime layers) :

 

 আদি কোশ বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়ার কোশ বাইরের থেকে একটি পুরু শক্ত আবরণী-ক্যাপস্যুল অথবা স্নাইম স্তর পরিবেষ্টিত থাকে। এই আবরণ কোশটিকে বাইরের ঘাত-প্রতিঘাত থেকে রক্ষা করে। ক্যাপস্যুল আবরণযুক্ত ব্যাকটেরিয়া সংক্রামক হয়। ক্যাপস্যুলযুক্ত ডিপ্লোকক্কাস (Diplococ- cus) নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টি করে।

 

2. কোশপ্রাচীর (Cell Wall): 

 

এটি ক্যাপস্যুল বা স্নাইম স্তরের ঠিক নীচেই অবস্থিত।

এটি প্রধানত মিউরিন (murein) বা পেপটাইডোগ্লাইক্যান (peptidoglycan) দিয়ে। গঠিত। এটি কোশকে যান্ত্রিক দৃঢ়তা প্রদান করে। 

 

3. প্লাজমাপর্দা (Plasma membrane) : 

 

কোশপ্রাচীরের ঠিক নীচেই লাইপোপ্রোটিন নির্মিত সূক্ষ্ম প্লাজমাপর্দার আবরণ থাকে। এটি ইউক্যারিওটিক কোশের মতোই ভেদ্য প্রকৃতির। এই পর্দা ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে মেসোজোম (mesosome) গঠন করে। মেসোজোম কোশ বিভাজনের সূচনা করে।

 

4. সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm):

প্লাজমাপর্দা বেষ্টিত যে জেলির মতো অর্ধতরল পদার্থ থাকে, তাকে সাইটোপ্লাজম বলে। রাইবোজোমের (ribosome) উপস্থিতির জন্য এটি দানাদার হয়। সাইটোপ্লাজমে সম্মিত খাদ্যবস্তু, লিপিড ও গ্লাইকোজেন দানা থাকে। সাইটোপ্লাজমে সাধারণত ভ্যাকুওল থাকে না। আদি কোশের রাইবোজোম 70S প্রকৃতির হয়। সাইটোপ্লাজমে এন্ডোমেমব্রেন (endomembrane) এবং কোনো পর্দাঘেরা কোশ-অঙ্গাণু থাকে না।

 

5. জেনেটিক পদার্থ (Genetic material): 

 

সাইটোপ্লাজমের একপ্রান্তে, প্লাজমাপর্দা সংলগ্ন চক্রাকার DNA তন্তু থাকে। এটির নিউক্লীয় পর্দা আবরণবিহীন। একে নিউক্লিওয়েড (nucleoid) বলে

 

6. ফ্ল্যাজেলা (Flagella): 

 

ব্যাকটেরিয়া কোশের ক্ষেত্রে এক বা একাধিক ফ্ল্যাজেলা থাকে। এটি ব্যাকটেরিয়ার সঞ্চালনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

 

7. পিলি বা ফিত্রি (Pilli or Fimbriae):

 

 এগুলি ফ্ল্যাজেলা অপেক্ষা সূক্ষ্ম এবং ক্ষুদ্র তত্তুর মতো। গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াতে এরকম অসংখ্য তত্ত্ব দেখা যায়। যাদের পিলি বা ফিত্রি বলে। এগুলির সাহায্যে ব্যাকটেরিয়া অপর কোশ বা তলে সংলগ্ন হয় অথবা এককোশ থেকে অপর কোশে DNA প্রদান করে (F পিলি)।

 

নীচে প্রোক্যারিওটিক কোশ-ব্যাকটেরিয়াম, মাইকোপ্লাজমা এবং নীলাভ-সবুজ শৈবালের কোশের গঠন আলোচনা করা হল-

 

ব্যাকটেরিয়া (Bacteria):

 

ব্যাকটেরিয়া (একবচনে-Bacterium; বহুবচনে-Bacteria) সাধারণত জার্ম (germ) বা মাইক্রোবস (microbes) নামে পরিচিত। লিউয়েনহিক (Leeuwenhoek) 1676 খ্রিস্টাব্দে প্রথম ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেন।

 

ব্যাকটেরিয়া আকারে সাধারণত গোলাকার (কক্কাস-coccus), দন্ডাকার (ব্যাসিলাস-bacillus), প্যাঁচালো

 

(স্পাইরিলাম- spirillum) এবং কমা চিহ্নের মতো (ভিব্রিও-vibrio) হয়। ব্যাকটেরিয়ার কোশের প্রধান অংশগুলি হল-(1) কোশ আবরক, (2) সাইটোপ্লাজন, (3) নিউক্লীয় পদার্থ বা নিউক্লিওয়েড, (4) প্লাসমিড এবং (5) ফ্ল্যাজেলা। 1. কোশ আবরক (Cell covering): ব্যাকটেরিয়ার প্রোটোপ্লাজম যে আবরণে আবৃত থাকে তার দুটি অংশ থাকে। যেমন একেবারে বাইরের দিকে পুরু জড় আবরণ থাকে তাকে কোশপ্রাচীর (cell wall) বলে। কোশপ্রাচীরের ঠিক নীচেই থাকে সজীব কোশপর্দা বা প্লাজমাপর্দা (plasma lemma)। উভয় পর্দার মাঝখানের স্থানকে পেরিপ্লাজনাটিক স্থান periplasmatic space) বলে। 

 

1. কোশপ্রাচীর (Cell well): 

 

এটি পুরু এবং দৃঢ়। কোশ প্রাচীর পেপটাইডোগ্লাইক্যান (peptidoglycan) এবং মিউকোপেপটাইড (mucopeptide) দিয়ে গঠিত। এছাড়া এই স্তরে শ্বেতসার বা পলিস্যাকারাইড, প্রোটিন ও লিপিড পাওয়া যায়। কোনো কোনো ব্যাকটেরিয়ার কোশপ্রাচীরের বাইরে পাতলা স্লাইম স্তর (slime layer) থাকে যা প্রতিকূল পরিবেশে শক্ত হয়ে ক্যাপসুল (capsule) গঠন করে।

 

(ii) কোশপর্দা বা প্লাজমা পর্দা (Cell membrane or Plasma membrane):

 

 কোশ প্রাচীরের নীচে লাইপো-প্রোটিন নির্মিত কোশ পর্দা থাকে। এই পর্দা কোশের মধ্যে এবং কোশের বাইরে বিভিন্ন অণু চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করে। কোশ পর্দার কোনো কোনো অংশে ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে ডেসমোজোম (desmozome), মেসোজোম (mesosome) ইত্যাদি অঙ্গাণু গঠন করে।

 

2. সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm): 

 

এটি ব্যাকটেরিয়া কোশে অবস্থিত নিউক্লীয় পদার্থবিহীন সান্দ্র তরল পদার্থ। ব্যাকটেরিয়ার সাইটোপ্লাজমে যেসব বস্তুগুলি দেখা যায়, সেগুলি হল-

 

(1) রাইবোজোম (Ribosome): ব্যাকটেরিয়ার সাইটোপ্লাজমে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাইবোনিউক্লিও প্রোটিন দ্বারা গঠিত পর্দাবিহীন দানা থাকে, এদের রাইবোজোম (ribosome) বলে। ব্যাকটেরিয়া রাইবোজোমগুলি 705 প্রকৃতির হয়, অনেক সময় রাইবোজোমগুলি পলিরাইবোজোম (polyribosome) গঠন করে। রাইবোজোমগুলি প্রোটিন সংশ্লেষে অংশগ্রহণ করে।

 

(ii) মেসোজোম (Mesosome): সাইটোপ্লাজমের পরিধির দিকে যে কতকগুলি কুণ্ডলীকৃত পর্দা (convoluted membrane) আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে, তাদের মেসোজোম বলে মেসোজোম ব্যাকটেরিয়ার শ্বসনে অংশগ্রহণ করে বলে বর্তমান বিজ্ঞানীরা মনে করেন (Stevenson, 1970)। এছাড়া কোশ বিভাজনের সময় কোশ প্রাচীর গঠনে অংশগ্রহণ করে।

 

(iii) সম্মিত খাদ্য (Reserve food): ব্যাকটেরিয়ার সাইটোপ্লাজমে নানাপ্রকার খাদ্যবস্তু সঞ্চিত থাকে, যেমন- ভলিউটিন দানা, গ্লাইকোজেন দানা, প্রোটিনের কেলাস, লাইপোপ্রোটিন দানা ইত্যাদি।

 

(iv) ক্রোমাটোফোর (Chromatophore): ব্যাকটেরিয়া কোশের সাইটোপ্লাজমে কোনো প্লাসটিড থাকে না। তবে কতিপয় ব্যাকটেরিয়া, যেমন-রোডোসিউডোমোনাস, (Rhodopsudomonas) রোডোস্পাইরিলাম (Rhodospirillum) ইত্যাদির সাইটোপ্লাজমে ব্যাকটেরিয়ো-ক্লোরোফিল (bacteriochlorophyll) নামক রঞ্জক পদার্থ থাকে। ব্যাকটেরিয়ার রঞ্জক পদার্থ থাইলাকয়েড বা ল্যামেলি বা ভেসিক্ত নামক কোশ-অঙ্গাণুতে সন্দ্বিত থাকে। সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়ার ভেসিক্সকে ক্রোমাটোফোর (chromatophore) বলে।

 

(v) RNA: RNA সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে। 3. নিউক্লীয় পদার্থ (Nuclear substance): ব্যাকটেরিয়ার কোশে কোনো আদর্শ নিউক্লিয়াস থাকে না। এদের দেহকোশে গোলাকার আংটির মতো একটি দ্বিতন্ত্রী DNA থাকে। ব্যাকটেরিয়ার জেনেটিক পদার্থকে অর্থাৎ DNA-কে ব্যাকটেরীয় ক্রোমোজোম (becterial chromosome) বা নিউক্লিওয়েড (nucleoid) বা জেনোফোর (genophore) বলে। নিউক্লিওয়েড ব্যাকটেরিয়ার বিভাজনে এবং রেণু উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।

 

  1. প্লাসমিড (Plasmid): ব্যাকটেরিয়া কোশে নিউক্লিয়েড ছাড়াও কয়েকটি ক্ষুদ্র চক্রাকার দ্বিতন্ত্রী DNA থাকে যারা স্বতন্ত্রভাবে বিভাজিত হতে পারে। এদের প্লাসমিড বলে।

 

  1. ফ্ল্যাজেলা (Flagella): কোনো কোনো ব্যাকটেরিয়ায় (ব্যাসিলাস, স্পাইরিলাম) এক বা একাধিক ফ্ল্যাজেলা লক্ষ করা যায়। ফ্ল্যাজেলার তিনটি অংশ থাকে, যথা- (১) বেসাল বডি (Basal body), (ii) হুক (Hook), (iii) অণুসূত্র ফিলামেন্ট (Fillament)। ফিলামেন্টে ফ্ল্যাজেলিন (Flagelin) নামক প্রোটিন থাকে।

 

  1. পিলি বা ফিমত্রি (Pilli or Fimbrae): ব্যাকটেরিয়ার দেহে ফ্ল্যাজেলা ছাড়াও অসংখ্য (100-400টি) সূক্ষ্ম সুতোর প্রতা এবং ফ্ল্যাজেলা অপেক্ষা ক্ষুদ্র যে গঠন দেখা যায় তাদের পিলি বা ফিমত্রি বলে। প্রতিটি পিলির দৈর্ঘ্য 0.5-20µm পর্যন্ত ন। পিলি পিলিন (Pilin) নামক প্রোটিন দিয়ে গঠিত। পিলির সাহায্যে ব্যাকটেরিয়া অপর কোশ তলে সংলগ্ন থাকতে পারে।

Post Comment

You May Have Missed