তাপদূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায়
Contents
► তাপদূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায় (Means of Thermal Pollution Control):
① তাপদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইডের অতিরিক্ত জোগান কমাতে হবে, যাতে পরিবেশ এমনিতেই ঠান্ডা থাকে।
② চুল্লির শীতলীকরণে ব্যবহৃত জল ঠান্ডা না করে সরাসরি নদী, হ্রদ বা মাছযুক্ত জলাশয়ে পাঠানো যাবে না।
তাপ দূষণ [Thermal Pollution]:
বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, 1850 থেকে 1900 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের গড়ে তাপমাত্রা বেড়েছে 0.5°C। আবার 1901 থেকে 2000 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে 1°C। সুতরাং আমাদের পরিবেশের উন্নতা যে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সমগ্র বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রার ক্রমবর্ধমান অবস্থাকে বিজ্ঞানীরা ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ (Global warming) নাম দিয়েছেন। আসলে গ্রিনহাউস গ্যাস যথা- কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি বেড়ে যাওয়ার ফলে পৃথিবীর গড় উন্নতা বেড়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে আমরা জানি, উদ্ভিদ এবং প্রাণী উভয়ইে একটি নির্দিষ্ট উন্নতায় সতেজ থাকে এবং এর পরিবর্তনে জীবের জীবনধারণ ব্যাহত হয়। যেসব উদ্ভিদ ও প্রাণী জলে বসবাস করে, জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে জলজ পরিবেশের ক্ষেত্রে তার প্রভাবও পড়ে। অনেকসময় লক্ষ করা যায়, বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে চুল্লি ঠান্ডা করার উদ্দেশ্যে নদী, হ্রদ বা বৃহৎ জলাশয় থেকে প্রচুর পরিমাণে জল নেওয়া হয় এবং ওই জল গরম অবস্থায় আবার জলাশয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় ফলে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে বাস্তুতন্ত্রে-এ একটা পরিবর্তন ঘটে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নদীতে বা হ্রদে বা জলাশয়ে অতিরিক্ত গরম জল ছেড়ে দেওয়ার ফলে ওই জল এত বেশি গরম হয় যে, তাতে জলজ প্রাণী, মাছ প্রভৃতি বসবাস করতে পারে না। অনেকসময় সমস্ত প্রাণী মরে যায়। জলের এই ধরনের তাপমাত্রা বা উন্নতা বৃদ্ধিকে তাপদূষণ বলে।
সংজ্ঞা (Definition) :
মানুষের সৃষ্ট শিল্প-ক্রিয়াকলাপে জল ও বায়ুর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার জন্য বাস্তুতন্ত্রের যেসব পরিবর্তন ঘটে তাকে তাপদূষণ বা থার্মাল পলিউশন বলে।
তাপদূষণের কারণ (Causes of Thermal Pollution):
তাপদূষণের প্রধান কয়েকটি কারণ হল-
(i) শিল্পাঞ্চলের কলকারখানার চিমনি নিঃসৃত উত্তপ্ত ধোঁয়া এবং মেশিনের ঘর্ষণজনিত তাপে বায়ুমণ্ডলে তাপদূষণ ঘটায়।
(ii) কুলার থেকে নিঃসৃত উন্ন জলীয় বাষ্প তাপদূষণ ঘটায়।
(iii) গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন অফিস, কাছারি, গবেষণাগার ইত্যাদি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের বাইরে তাপদূষণ ঘটে।
( iv) শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন মেশিনকে ঠান্ডা করার জন্য পর্যাপ্ত জলের প্রয়োজন হয়। ওই সময় উত্তপ্ত বর্জ্যজল বিভিন্ন জলাশয়ে নিক্ষেপ করলে তাপদূষণ ঘটে। জলের তাপদূষণের প্রধান উৎস হল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইস্পাত মিল, তৈল শোধনাগার, পেপার মিল ইত্যাদি।
তাপদূষণের প্রভাব (Effect of Thermal Pollution):
সমগ্র জীবজগৎ-এর ওপর তাপদূষণ বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। নীচে তাপদূষণের কয়েকটি প্রভাব উল্লেখ করা হল-
① সাধারণভাবে জলের তাপমাত্রা নির্ভর করে ঋতুর ওপর কিন্তু এই ঋতুবৈষম্য ছাড়াও তাপদূষণের ফলে প্রকৃতির অস্থিরতা লক্ষ করা যায়। ফলে জলজ প্রাণীদের ওপর তার প্রভাব পড়ে।
② মাছ ও জলজ অন্যান্য প্রাণীরা একটি বিশেষ তাপমাত্রা পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারে। যে স্তরের তাপমাত্রায় তারা ভালোভাবে থাকতে পারে সেটি অবশ্যই কম তাপমাত্রা। ফলে তাপদূষণ ঘটলে ওই সমস্ত প্রাণীরা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। ফলে পৃথিবী থেকে তারা অবলুপ্ত হবে।
③ তাপদূষণের ফলে পৃথিবীর গড় উয়তা বৃদ্ধি পেলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলবে এবং সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে।
④ তাপদূষণের ফলে উন্নতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য দাবানলের মাধ্যমে বনভূমি ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। ⑤ তাপদূষণের ফলে বাস্তুতন্ত্র ও সমগ্র জীবজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
Post Comment