কিভাবে শব্দের তীব্রতা পরিমাপ করা হয় 

 

Contents

শব্দের তীব্রতার পরিমাপ (Measurment of intensity of Sound): 

 

শব্দের তীব্রতা পরিমাপের একটি বহুল প্রচলিত একক হল ডেসিবেল (Decibel-dB)। সংজ্ঞানুযায়ী, শব্দ এবং প্রমাণ শব্দের তীব্রতার অনুপাতের লগ (login)-কে বেল (bel) বলে (1) বেল 10 ডেসিবেল)। পষের আবিষ্কর্তা আলোকজান্ডার গ্রাহম বেলের নামানুসারে এই এককের নামকরণ।

ডেসিবেলের সংজ্ঞা গাণিতিকভাবে প্রকাশ করা যায় নীচের সমীকরণটির মাধ্যমে-

 

ডেসিবেল(dB) =10log 10 নির্ণীত শব্দ প্রাবল্য (I)/

                                 প্রামাণের শব্দ প্রাবল্য(l০)

 

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, শব্দের তীব্রতা হল 10^-12 ওয়াট প্রতি বর্গমিটার এবং প্রমাণ শব্দের তীব্রতা হল সেই শব্দ যার চাপ 2×10-5 নিউটন প্রতি বর্গমিটার। ISI-এর চার্ট অনুযায়ী বিভিন্ন উৎসগুলি থেকে আসা শব্দের মাত্রা হওয়া উচিত 20-60 ডেসিবেলের মধ্যে। 65 ডেসিবেল বা এর থেকে বেশি তীব্রতার শব্দকে কোলাহল বা Noise বলে। শব্দের তীব্রতা 120 dB-এর থেকে বেশি হলে মানুষের শরীর এবং মনের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। শব্দের ডেসিবেল স্কেলে 0 থেকে 140 পর্যন্ত ভাগ আছে। 

 

শব্দ দূষণ বা কোলাহল দূষণ [Sound Pollution or Noise Pollution]: 

 

শব্দ একপ্রকারের শক্তি। শব্দ উৎস থেকে তরঙ্গের আকারে ছড়িয়ে পড়ে। শব্দের উৎস সেকেন্ডে 20-20000 বার কম্পিত হলে যে শব্দের সৃষ্টি হয় তাকে শ্রুতিগোচর শব্দ বলে। 

 

শব্দের তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে-

 

(1) তীব্রতা বা প্রাবল্য (intensity), (2) তীক্ষ্মতা (pitch), (3) গুণ বা জাতি (quality)। তবে এই শব্দ যদি বেসুরো হয়, তাহলে তা আমাদের মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক করে। সেই শব্দ তখন যন্ত্রণা বা কোলাহলে পরিণত হয়। মোট কথা শ্রোতার কাছে অনভিপ্রেত, অস্বস্তিকর, বেসুরো বিরক্তি উদ্রেককারী শব্দকে কোলাহল বা noise বলে

 

■ শব্দের সংজ্ঞা (Defintion of Sound) : 

 

বস্তুর কম্পনের ফলে স্থিতিস্থাপক কোনো মাধ্যমে বস্তুকণারা বেগ, সরণ ও মাধ্যমের চাপের যে প্রত্যাবর্তী পরিবর্তন বিস্তার লাভ করে তাকে শব্দ বলে। শব্দ হল একপ্রকার শক্তি। শব্দ সৃষ্টিকারী উৎসের কম্পন নিয়মিত, নিরবচ্ছিন্ন এবং পর্যাবৃত্ত হলে যে শব্দ নির্গত হয়, তাকে সুরযুক্ত শব্দ বা Musical souond বলে। অন্যদিকে, শব্দ উৎপন্নকারী উৎসের কম্পন যদি অনিয়মিত ও বিচ্ছিন্ন হয় এবং পর্যাবৃত্ত না হয়, তাহলে যে শব্দ নির্গত হয় তাকে সুরবর্জিত শব্দ বা কোলাহল বলে। সুরবর্জিত শব্দই শব্দদূষণ ঘটায়। সুরবর্জিত শব্দকে শব্দদূষণ বলে। শব্দ দূষক (noise pollutant) মানুষের মধ্যে বিরক্তি উৎপাদন করে।

 

শব্দ দূষণের সংজ্ঞা (Definition of Noise pollution): 

 

মানুষের সহনক্ষমতার অতিরিক্ত সুরবর্জিত কর্কশ শব্দ যা মানুষের শারীরবৃত্তীয় স্বাভাবিক কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটায় এবং শরীর ও মনের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তাকে শব্দ দূষণ বলে।

 

অন্যভাবে বললে, মানুষের সহন ক্ষমতা বা শ্রুতিসীমার অতিরিক্ত তীব্র, তীক্ষ্ণ, অবাঞ্ছিত, কর্কশ এবং বেসুরের অস্বস্তিকর শব্দকে শব্দ দূষণ বলে। 

 

শব্দ দূষণের উৎস (Source of Noise Pollution): 

 

বাজ পড়ার শব্দ এবং মেঘের গর্জন প্রভৃতি প্রাকৃতিক কারণ ছাড়া বেশিরভাগ শব্দ দূষণ মানুষের সৃষ্ট বিভিন্ন ক্রিয়ায় ঘটে। 

 

শব্দ দূষণের প্রধান কারণ বা উৎসগুলির নিম্নরূপ: 

 

① যানবাহনের দ্বারা শব্দ দূষণ শব্দ দূষণের একটি অন্যতম কারণ হল যানবাহন। বাস, লরি, মোটর গাড়ি, ট্রাম, টেম্পো প্রভৃতি চলাচলের অস্বাচ্ছন্দ্য সৃষ্টিকারী শব্দ এবং বিভিন্নপ্রকার বৈদ্যুতিক হর্নের তীব্রতাও মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তা ছাড়া হাসপাতাল, বিদ্যালয় ও অন্যান্য নীরব কর্মব্যস্ত স্থানে শব্দ দূষণ বাড়ছে।

 

② রেল পরিবহণের মাধ্যমে শব্দ দূষণ: রেলগাড়ি একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়ার সময় এবং রেলস্টেশনে যাত্রী ওঠানামার সময় শব্দ দূষণ ঘটে। স্টেশনের সন্নিকটে যারা বসবাস করে, তারা এই শব্দ দূষণের প্রকোপে পড়ে। ট্রেনের হুইসেলের শব্দ কয়েক মাইল দূর থেকে শোনা যায়।

 

③) বিমান পরিবহণের দ্বারা শব্দ দূষণ: এরোপ্লেন, হেলিকপ্টার আকাশে ওড়ার সময় এবং আকাশপথে একস্থান থেকে অন্যস্থানে পরিবহণের সময় বিকট শব্দ সৃষ্টি করে। এ ছাড়া জেট বিমান ও সুপারসোনিক বিমান চলাচলের শব্দ থেকেও শব্দ দূষণ ঘটে।

 

④ বিভিন্ন শিল্প-কারখানার যন্ত্রের মাধ্যমে শব্দ দূষণ: বিভিন্ন কলকারখানাতে যন্ত্রের আওয়াজ শব্দ দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়। যন্ত্রের আওয়াজ কারখানার শ্রমিকসহ কারখানা অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে। এই সমস্ত কারখানার মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা, টেক্সটাইল লুম, নিউজপেপার প্রেস, চাবি পাঝিং মেশিন, গাড়ি সারাই কারখানা প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

 

(5) যান্ত্রিক ক্রিয়াঘটিত দূষণ। ডিজেল চালিত জেনারেটর, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ওয়াশিং মেশিন, এয়ারকুলার, মিক্সি মেশিন, গম ভাঙানো মেশিন, রাইস মিলের (ধান থেকে চাল তৈরির মেশিনের) ক্রিয়া থেকে উৎপন্ন শব্দ স্থানীয় অঞ্চলের মানুষের মধ্যে শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে।

 

⑥ প্রতিবেশী ও দোকানপাট থেকে দূষণ: কোনো অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ যখন বাড়িতে জোরে জোরে টিভি চালায়, রেডিয়ো চালায় বা টেপরেকর্ডারে গান শোনে বা লাউডস্পিকার ব্যবহার করে তখন সেই শব্দ থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা বা প্রতিবেশীরা শব্দ দূষণের কবলে পড়ে। 

 

(7) কথোপকথনের মাধ্যমে দূষণ: বিভিন্ন অফিসে, শেয়ার বাজারে বা কোনো মিটিং-মিছিল বা জমায়েত, স্কুল-কলেজে বা রেস্টুরেন্টে উচ্চৈঃস্বরে মানুষের কথোপকথন থেকে শব্দ দূষণ ঘটে থাকে।

 

(8) সামাজিক কারণে দূষণ: কোনো পুজো-পার্বণ বা বিয়েবাড়ি উপলক্ষ্যে, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী বা কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যখন মাইক বাজানো হয় বা বাজি পোড়ানো হয় তখন মাইক ও বাজির শব্দ থেকে শব্দ দূষণ ঘটে থাকে।

 

মানুষের ওপর শব্দ দূষণের প্রভাব: 

 

শব্দ দূষণ মানবস্বাস্থ্যের ওপর বা মানবজীবনের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। অত্যধিক শব্দের ফলে মানুষের মধ্যে বিরন্তির উদ্রেক হয়। অনেক সময় শব্দদূষণের ফলে মানবদেহে অস্থায়ী বা স্থায়ী শারীরিক বা মানসিক রোগ সৃষ্টি হয়। আলোচনার সুবিধার জন্য মানুষের ওপর শব্দ দূষণের প্রভাবকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।

 

Ⓐ শব্দ দূষণের অস্থায়ী প্রভাব:

 

① কোনো কারণে উচ্চমাত্রার শব্দ মানুষের কর্ণের পর্দার সাময়িক ক্ষতি করে। এর ফলে অস্থায়ীভাবে মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট হয়। দীর্ঘ সময় ৭০ ডেসিবেল শব্দের মধ্যে থাকলে আংশিক বধিরতা দেখা দেয়।

 

② দীর্ঘ সময় ধরে 125 ডেসিবেল শব্দের নিকটে থাকলে কানের মধ্যে যন্ত্রণার উদ্রেক হয়।

 

③ অনেক সময় জেট বিমানের শব্দ, মাইকের আওয়াজ প্রভৃতি শব্দ শ্রবণে বাধা সৃষ্টি করে। একে মাস্কিং বলে। 

 

(B) শব্দ দূষণের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব:

 

① শ্রবণ যন্ত্রের ওপর প্রভাব: 

দেখা গেছে, দীর্ঘদিন 100 ডেসিবেল শব্দের মধ্যে কাটালে বধিরতা দেখা দেয়। কারণ অনেক সময় 100 ডেসিবেল শব্দের ফলে অন্তঃকর্ণের অর্গান অফ কর্টির (শ্রুতিযন্ত্র) কোশগুলি একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া অনেকক্ষেত্রে 160 ডেসিবেল মাত্রার বিকট শব্দের ফলে কানের পর্দা পর্যন্ত ছিঁড়ে যায়। ফলে মানুষ স্থায়ীভাবে বধির হয়ে পড়ে।

 

② হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাব:

 

দীর্ঘস্থায়ী বিকট আওয়াজ মানুষের হৃদ্যন্ত্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এতে হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়ে যায় বা কমে যায়। অনেক সময় রক্তে ক্যালশিয়ামের মাত্রা হ্রাস পায়, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস পায় বা রক্তে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। শব্দ দূষণের ফলে অনেক সময় ধমনির রক্তের চাপও বেড়ে যায়। 

 

③ শ্বাসকার্যের ওপর প্রভাব:

শব্দ দূষণের ফলে বহু মানুষের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের হার পরিবর্তিত হয়। উঁচু তীব্র শব্দের প্রভাবে শ্বাসক্রিয়ার গভীরতাও বেড়ে যায় এবং দ্রুত প্রশ্বাস গ্রহণ ও নিশ্বাস ত্যাগ হয়।

 

④ মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব:

 

যন্ত্রণাদায়ক শব্দ মানুষের স্নায়ুতন্ত্র তথা মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকান্ডকে প্রভাবিত করে। অনেক সময় স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়, মানসিক অবসাদ দেখা দেয়। বিকট শব্দের ফলে মাথা ধরে, শরীরে বিভিন্ন প্রকার উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া কারো কারোর মধ্যে বমিভাব -ও খিঁচুনিভাব দেখা দেয়। বিভিন্ন কাজের একাগ্রতা নষ্ট হয়। অনেক সময় অনিদ্রাও শুরু হয়। শব্দ দূষণের ফলে শরীরে স্বয়ংক্রিয় নার্ভতন্ত্রের ক্রিয়াও ব্যাহত হয়। মানুষের হাঁটতে-চলতে অসুবিধা হয়।

 

⑤ চক্ষুর ওপর প্রভাব:

শব্দ দূষণের ফলে অনেক মানুষের দৃষ্টিশক্তির ত্রুটি লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন রঙের আলো চেনার ক্ষমতা নষ্ট হয়। অনেক সময় শব্দদূষণের ফলে চোখের তারারন্দ্রের প্রসারণ ঠিকমতো হয় না।

 

⑥ বন্য পশু এবং পাখির ওপর শব্দ দূষণের প্রভাব:

 

বন্যপ্রাণীরা শব্দ দূষণের ফলে মানুষের থেকে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্য পরিবেশে অতিরিক্ত কোলাহল সৃষ্টি হলে বন্যপ্রাণীরা শিকার বা শিকারিকে চিহ্নিত করতে পারে না। তার ফলে তারা শিকার করতেও ব্যর্থ হয় বা শিকারির দ্বারা নিহত হয়। বন্য পরিবেশে অতিরিক্ত শব্দ দূষণ হলে তারা শব্দের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে না। বিশেষ করে প্রজনন ঋতুতে তারা সঙ্গীর ডাক শুনতে না পারার জন্য প্রজননে ব্যর্থ হয়। সাধারণত বন্যপ্রাণীর শ্রবণ ক্ষমতা মানুষের থেকে অনেক বেশি। বাড়ির পোষা কুকুর, বিড়াল বা পাখিরা শব্দ দূষণের ফলে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে বা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। শব্দ দূষণের ফলে পাখিরাও প্রজননে অংশ নিতে পারে না। বিশেষ করে পরিযায়ী পাখিরা প্রজনন ঋতুতে শীতদেশ থেকে ভারতবর্ষের ঝিলে ডিম পাড়তে আসত। কিন্তু বর্তমানে শব্দ দূষণের ফলে তারা আমাদের দেশে খুব কম সংখ্যায় আসে। 

 

⑦ পরিবেশের ওপর প্রভাব:

শব্দ দূষণের ফলে প্রজননে অংশ নিতে না পারার জন্য পশু ও পাখির নতুন অপত্য পৃথিবীতে আসে না। তার ফলে অনেক পাখির সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। প্রজননের অভাবে অনেক পশু এবং পাখি ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য পরিবেশের বাস্তুরীতির ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এবং তার প্রভাব মানুষের মধ্যেও পড়ে।

 

• শব্দ দূষণের সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রণ (Probable Control of Noise Pollution): 

 

শব্দ দূষণ নিম্নলিখিত উপায়ে নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করা যায়। যথা-A.প্রযুক্তিগত উপায়ে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, B.আইনসম্মত উপায়ে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, C. পরিবেশগত উপায়ে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং D. জনশিক্ষার মাধ্যমে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ।

 

(A)প্রযুক্তিগত উপায়ে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ: 

 

(i) বিভিন্ন কলকারখানার বা শিল্পসংস্থার পুরোনো আমলের উচ্চ শব্দ বা কর্কশ শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রের প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটিয়ে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করা যায়। (ii) অনেকক্ষেত্রে, যেসব যন্ত্রপাতি থেকে অবাঞ্ছিত শব্দ উৎপন্ন হয়, সেইসব যন্ত্রপাতির ওপর শব্দ নিয়ন্ত্রণকারী আচ্ছাদনের ব্যবহারের মাধ্যমে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। (iii) যেসব মানষ বিভিন্ন শিল্পে বা অন্যস্থানে যেখানে 40 ডেসিবেলের বেশি শব্দের প্রভাব রয়েছে সেখানে কাজ করেন, তাঁদের জন্য শব্দ-প্রতিরোধক ইয়ার প্লাগ, ক্যানাল কাপ এবং ইয়ার মাফ ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে শব্দ দূষণ ওইসব মানুষের ওপর তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। (iv) যেসব শিল্পকারখানায় প্রচণ্ড শব্দ উৎপন্ন হয়, সেখানে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধের শব্দ-প্রতিরোধী অঞ্চল তৈরি করার প্রয়োজন হয়। (v) গাড়ির হর্নের তীব্র আওয়াজ প্রতিরোধ করার জন্য সাইলেনসার লাগাতে হবে। 

 

(B) আইনসম্মত উপায়ে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ: 

 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শব্দ দূষণ-বিরোধী আইন প্রচলিত হয়েছে। ভারতেও হাসপাতাল, বিচারালয় ও শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে 100 মিটারের মধ্যে শব্দ সৃষ্টি করা আইনত নিষিদ। এ ছাড়াও অন্যান্য স্থানের জন্য শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী কিছু বিধিনিষেধ আছে, কলকাতা হাইকোর্ট এই বিধি নির্দেশিকা প্রকাশ করে। শুধু তাই নয়, ‘মোটর ভেহিকলস অ্যাক্ট’ (Motor Vehicles Act) অনুযায়ী বসতি অঞ্চলে গাড়ি চালানোর সময় হর্ন ব্যবহারের মাত্রাও নির্দিষ্ট করা আছে। 

 

© পরিবেশগত উপায়ে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ: 

 

(i) গাছপালা শব্দ শোষণ করতে পারে। তাই শহর অঞ্চলে রাস্তার দু-ধারে গাছপালা লাগিয়ে শব্দদূষণ রোধ করা হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, তেঁতুল, বট, অশোক, নিম, নারকেল, দেবদারু প্রভৃতি উদ্ভিদ বেশিমাত্রায় শব্দ শোষণ করে। 

 

(ii) বর্তমানে শহর অঞ্চলে অনেক বাড়িতে ঘরের প্রাচীর এবং ছাদে শব্দ-নিরোধক দ্রব্য দ্বারা আচ্ছাদিত করা হয়। এর ফলে শব্দদূষণ কিছুটা প্রতিরোধ করা হয়।

 

 

(D) জনশিক্ষার মাধ্যমে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ: 

 

(1) বিভিন্ন প্রকার গণমাধ্যমের সহায়তায় প্রচারের দ্বারা শব্দ দূষণের কুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করলে, শব্দ দূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়। (ii) বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে 65 ডেসিবেল-এর নীচে মাইক বাজানো হলে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রিত হয়। (ii) আতশবাজি পোড়ানো, পটকা ফাটানো বন্ধের ব্যাপারে মানুষজনকে সচেতন করলে, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ হয়। (iv) স্কুটার, মোটর সাইকেল মোটরগাড়ি ইত্যাদির অযথা হর্ন ব্যবহার না করলে শব্দ দূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

Post Comment

You May Have Missed