গ্রিন বেঞ্চ [Green Bench] কি? এবং এর সম্পর্কে আলোচনা করা
■ সংজ্ঞা (Definition):
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্ট 1986 খ্রিস্টাব্দে পরিবেশ সংক্রান্ত মামলার ফয়সালা করার জন্য যে নতুন বেঞ্চ গঠন করেছিলেন তাকে গ্রিন বেঞ্চ বলা হয়। গ্রিন বেস্তু কথাটি দুটি আলাদা শব্দের সমাহারে গঠিত হয়েছে। একটি হল Green অর্থাৎ সবুজ এবং অপরটি হল Bench, এর অর্থ বিচারালয় বা বিচারাসন। সুতরাং Green Bench কথাটির অর্থ হল ‘সবুজায়নের জন্য বিচারালয়’। সারা পৃথিবীর মানুষ আজ সবুজায়নের কথা ভাবছেন। আর এই সবুজায়নের পথে বাধা-বিপত্তির থেকে ধরণিকে বাঁচানোর জন্য বিশেষ এই Green Bench গঠিত হয়েছে।
পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষার জন্য 1972 খ্রিস্টাব্দে সুইডেনের স্টকহোমে বিশ্বজাতি সংস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সম্মেলনে আলোচিত হয় পৃথিবীর পরিবেশকে অবক্ষয় ও ধ্বংস থেকে বাঁচানোর বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে। মানুষ যেদিন আগুনের ব্যবহার শিখেছিল সেদিন থেকেই পৃথিবীর পরিবেশ দূষিত হতে শুরু করে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেড়েছে। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত প্রায় পঞ্চাশ বছরে দূষণের প্রকটতা বড়ো বেশি দেখা যাচ্ছে। দিনে দিনে জমি অনুর্বর হচ্ছে, গাছপালার সংখ্যা ক্রমেই কমছে। জীববৈচিত্র্য আজ ধ্বংসের মুখে, পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষাক্ত হচ্ছে। মাতৃদুগ্ধেও পাওয়া যাচ্ছে DDT জাতীয় কীটনাশক।
এসব কারণে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সারা পৃথিবীর সঙ্গে ভারতেও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য
The Environment Protection Act, 1986′ প্রণয়ন করা হয়েছে। মহামান্য ভারত সরকারের গেজেট প্রকাশিত হয় 1986 খ্রিস্টাব্দে। দূষণ দমনের জন্য আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠীর হাতে প্রচুর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই উদ্দেশ্যেই গঠিত হয়েছে ‘Green Bench’। আমাদের রাজ্যে ‘গ্রিন বেঞ্চ’ গঠনের ব্যাপারে হাওড়া গণতান্ত্রিক নাগরিক সমিতির ভূমিকা খুবই উল্লেখযোগ্য এবং প্রশংসনীয়। দেশকে সবুজে ভরিয়ে তুলতে এরা বিশেষভাবে উদ্যোগী। পরিবেশের ওপর কোনোরূপ অবিচার দেখলেই নব প্রতিষ্ঠিত Green Bench-এ আবেদন করার পথপ্রদর্শক এরাই। বর্তমানে Green Bench খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বহু প্রতিষ্ঠান, ব্যস্তিও এখন এ ব্যাপারে এগিয়ে এসেছেন। মোট কথা, গঙ্গাদুষণ, তাজমহলের ক্ষয় থেকে শুরু করে জাতীয় ও সংস্কৃতিসম্পন্ন দূষণ রোধের ক্ষেত্রে Green Bench বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
গ্রিন বেঞ্চের সহায়তা নিয়ে বহু আন্তর্জাতিক, জাতীয় এবং স্বাধীন সংস্থা পরিবেশ দূষণ রোধে এবং দেশে সবুজায়ন ঘটানোর জন্য কাজ করছে। গ্রিন বেঞ্চের এই সহায়তা হয়তো আমাদের এই পৃথিবীকে আরও বেশকিছু সময় ‘মানুষের বাসযোগ্য থাকতে’ সাহায্য করবে। ( ওপরের আলোচনায় দেখা গেছে পরিবেশসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ভারতের সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের উচ্চ আদালতে
হাইকোর্টগুলিতে) বিভিন্ন ‘গ্রিন বেঞ্চ’ স্থাপন করা হয়। এখানে বহু সংখ্যক আবেদন জমা পড়ে যা মানবাধিকারের প্রয়োজনে আইনের সাহায্য নিতে চায়। পরিবেশসংক্রান্ত বিষয় আলোচনার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে 1996 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের পর থেকে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন করে এর বৈঠক বসে। 1996 থেকে 1999-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রিন বেঞ্চে যতগুলি মামলা হয় তা হল-
1997 – 222 টি
1999 (সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত) 151 টি
গ্রিন বেঞ্চের এই মামলাগুলি পরিবেশসংক্রান্ত নিম্নলিখিত বিষয়ের বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করবে- (i) যেসব শিল্পগুলি দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না এবং সব বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করছে।
(ii) পুকুর বা জলাশয় বেআইনিভাবে ভরাট করা।
(iii) বৃক্ষচ্ছেদন করা।
(iv) যানবাহন থেকে ধোঁয়া নির্গত হওয়া।
(v) জৈব বর্জ্যপদার্থ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা ।
(vi) বর্জ্যপদার্থের স্তূপ এবং বর্জ্যের উৎস পরিশোধন বিষয়ে।
(vii) রাজ্যের বিভিন্ন মর্গের দূষণ ক্রিয়া।
viii) পুকুর এবং উদ্যানের পরিবেশের গুণগুলি বজায় রাখা।
গ্রিন বেঞ্চের বৈশিষ্ট্য হল এখানে আইনবন্ধ আবেদন ছাড়াও একটি চিঠিতে দরখাস্ত করেও আবেদন করা যায়।
Post Comment