গ্রিনহাউসের প্রভাবগুলি কী কী? (What are Green House Effects) :
পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের ওপর গ্রিনহাউস প্রভাব বিস্তার করে। ওইসব প্রভাবগুলির মধ্যে কয়েকটি নীচে আলোচনা করা হল।
Contents
① উষ্ণতা বৃদ্ধি:
কার্বন ডাইঅক্সাইড, ওজোন এবং জলীয় বাষ্প সমন্বিত বায়ুস্তর পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে অবলোহিত রশ্মির (Infra-red ray) প্রতিফলন ঘটিয়ে মহাশূন্যে বিকিরিত হতে দেয় না। এর ফলে ভূপৃষ্ঠের উয়তা বাড়ে। ওইসব গ্যাসের আধিক্যে উন্নতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বিগত শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বা উন্নতা বৃদ্ধি ঘটেছে 1°F।
② সমুদ্রে জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি:
গ্রিনহাউস প্রভাবের ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে মেরু অঞ্চলের বরফ বেশি মাত্রায় গলবে এবং এর ফলশ্রুতি হিসেবে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বাড়বে। এই শতাব্দীতে জলতলের উচ্চতা প্রায় 4″ থেকে 10° বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন পরিবেশে দূষণ যেভাবে বাড়ছে এবং গাছপালা কাটার ফলে বায়ুমণ্ডলে যেভাবে CO₂-এর পরিমাণ বাড়ছে তাতে আগামী শতাব্দীতে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা 6″ থেকে 37″ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ, সুন্দরবন অঞ্চল, নেদারল্যান্ড, ইজিপ্ট, মার্শাল দ্বীপ প্রভৃতির বেশ কিছু অংশ সমুদ্রগর্ভে চলে যাবে।
③ জলচক্রের পরিবর্তন:
গ্রিনহাউসের প্রভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র, বায়ুমণ্ডল এবং ভূপৃষ্ঠের মধ্যে যে জলচক্র আছে তার পরিবর্তন ঘটবে।তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে অধিক পরিমাণ জল বাষ্পীভূত হবে এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মৃত্তিকা একেবারে শুদ্ধ হয়ে পড়বে। গ্রীষ্মকালে গরমের পরিমাণ অধিক হবে। আবার বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির ফলে বন্যা হবে।
④ স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব:
গ্রিনহাউস প্রভাবের ফলে তাপমাত্রা এমনভাবে বৃদ্ধি পাবে যে, রাত ও দিনের তাপমাত্রার মধ্যে তেমন কোনো প্রভেদ থাকবে না। ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। বিভিন্ন প্রকার রোগ যেমন-ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, পীতজ্বর, প্রভৃতির প্রাদুর্ভাব বাড়বে। বহু মানুষ হাঁপানি, অ্যালার্জি প্রভৃতি রোগের প্রকোপে পড়বে।
⑤ বাস্তুরীতির ওপর প্রভাব:
গ্রিনহাউস প্রভাবের ফলে বিভিন্ন প্রাণী এবং উদ্ভিদের যথেষ্ট ক্ষতি হবে। কারণ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী এবং উদ্ভিদ বিভিন্ন উন্নতায় জীবনধারণ করে। উন্নতার পরিবর্তন ঘটলে ওইসব উদ্ভিদ ও প্রাণী পৃথিবী থেকে ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে পৃথিবীর জীববৈচিত হ্রাস পাবে।
⑥ বনাঞ্চলের ওপর প্রভাব:
গ্রিনহাউসের প্রভাবের ফলে পুরোনো দিনের বহু বনাঞ্চল ধ্বংস হবে এবং কিছু কিছু নতুন ধরনের উদ্ভিদের সৃষ্টি হবে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন, আগামী একশো বছরে বিভিন্ন শ্রেণির উদ্ভিদ মেরু অঞ্চলের দিকে প্রায় একশো মাইল থেকে তিনশো চল্লিশ মাইলের মধ্যে সরে যাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালাও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
⑦ মরুভূমির ওপর প্রভাব:
নহাউস প্রভাবের ফলে দিনে গ্রিনে মরুভূমির উয়তা আরও বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি আরও শুষ্ক হয়ে মরুভূমির বিস্তৃতি আরও বাড়বে।
③ তুষারমণ্ডলের ওপর প্রভাব:
বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছেন, আগামী একশো বছরের মধ্যে উয়তা বৃদ্ধির ফলে তুষারাবৃত পর্বতমালার তুষার প্রায় এক-তৃতীয়াংশের বেশি গলে যাবে। নদীতে জলের প্রবাহও এখনকার মতো থাকবে না। ফলে আগামী দিনে জলের অভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে।
⑨ নদনদী ও জলাশয়ের ওপর প্রভাব:
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বন্যা ও খরার স্থিতিকাল বাড়বে। ফলে বিভিন্ন জলাভূমি, নদীনালা ও হ্রদের জলের গুণমান হ্রাস পাবে। জলজ প্রাণীরা প্রজননের অভাবে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হবে।
⑩ সমুদ্রোপকূলের ওপর প্রভাব:
মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাবে। বন্যার পরিমাণ আরও বাড়বে। সমুদ্রসংলগ্ন অঞ্চল জলের তলায় চলে যাবে। এই অঞ্চলে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গ্রিন হাউসের প্রভাবে একদিকে যেমন-খরা, বন্যা, ঝড়, সাইক্লোন, সমুদ্রের জলোচ্ছাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা তেমনি বিভিন্ন রোগাক্রমণ, বিশেষ করে ম্যালেরিয়া, কলেরা, প্লেগ ইত্যাদি মহামারিরূপে দেখা দেবে। সেই সঙ্গে পানীয় জলের সমস্যা, মৎস্য চাষের সমস্যা, চাষবাসের সমস্যা দেখা দেবে।
Post Comment