বসুন্ধরা সম্মেলন [Earth Summit]
পরিবেশগত সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য, পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষা করার জন্য, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য এবং পরিবেশ-মান উন্নয়নের জন্য যে আন্দোলন করা হয়, তাকে এনভায়রনমেন্টাল মুভমেন্ট (Environmental Movement) বা পরিবেশ আন্দোলন বলে। পরিবেশসংক্রান্ত নানান সমস্যার সমাধান কল্পে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা কাজ শুরু করেছে। এই উদ্দেশ্যে একদিকে যেমন-চিপকো আন্দোলন, নর্মাণ বাঁচাও আন্দোলন, প্রিনপিস আন্দোলন প্রস্তুতি সংঘটিত হয়েছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে। 1972-এর 5 থেকে 16 জুন পর্যন্ত সুইডেন স্টকহোম সম্মেলন এবং রাষ্ট্রসংঘের তত্ত্বাবধানে বসুন্ধরা সম্মেলন।
এই সম্মেলন এবং আন্দোলনের মূল কথা হল পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা। কাংসের হাত থেকে পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখা।
1992 খ্রিস্টাব্দের ও জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রসংঘের তত্ত্বাবধানে ব্রাজিলের ‘রিও-ডি-জেনিরো’তে (Rio-de-Janeiro) আন্তর্জাতিক পরিবেশসংক্রান্ত বিষয়গুলি পর্যালোচনার জন্য যে সম্মেলন করেছিলেন তা আর্থ সামিট’ বা ‘বসুন্ধরা সম্মেলন’ নামে পরিচিত। এই সম্মেলনে ভারত সহ পৃথিবীর মোট 130টি দেশ অংশগ্রহণ করে।
‘আর্থ সামিট’-এ-পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং তার নিয়ন্ত্রণের জন্য একুশ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ওই সম্মেলনের কর্মসূচিগুলি আমাদের দেশে এজেন্ড-21′ (Agenda-21) নামে পরিচিত। সাসটেনেবল ডেভলপমেন্ট বা স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য অর্থাৎ পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক দীর্ঘমেয়াদি, সামগ্রিক মানব উন্নয়ন ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে একুশ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ‘আর্থ সামিট’-এর একুশ দফা কর্মসূচি নিম্নরূপ-
(1) বায়ুমন্ডলের সুরক্ষা।
(2) বনানীর বিলোপ সংগিত করা।
(ii) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা।
(iv) স্বাস্থ্যরক্ষার সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(ঘ) জনবসতি উন্নয়নের স্থিতিশীল বা স্থায়ী বন্দোবস্ত করা।
(vi) জনগণের দারিদ্র্য দূর করা।
(vii) উন্নয়নশীল দেশগুলির স্থায়ী উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সহযোগিতা।
জনসংখ্যা সম্পর্কিত স্থায়ী উন্নয়ন।
(xii) পার্বত্য এলাকার স্থায়ী উন্নয়নের প্রকল্প গ্রহণ করা।
(xiii) গ্রামীণ উন্নয়ন ও স্থিতিশীল প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষির উন্নতি ঘটানো।
(xiv) সমুদ্র ও সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা করা।
(xv) জলসম্পদ উন্নয়ন করা।
xvi) মানুষের ভোগের পরিবর্তন করা।
xvii) পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে পরিকল্পনা মাফিক উন্নয়ন করা।
xiii) পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে বিষাক্ত বর্জ্যের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
xix) বিপজ্জনক রাসায়নিক বর্জ্যের আন্তর্জাতিক পাচার বন্ধ করা।
- xx) তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের নিরাপদ ও পরিবেশসম্মত বন্দোবস্ত করা।
- xi) দূষিত জল ও কঠিন বর্জ্যের নিরাপদ ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা।
এগুলি ছাড়াও সম্মেলনে পরিবেশসংক্রান্ত 27টি নীতি নির্ধারণ করা হয়। এই সম্মেলনে পৃথিবীর উন্নয়ন এবং উন্নতশীল দেশগুলির মধ্যে পরিবেশসংক্রান্ত দায়িত্বের ব্যাপারে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। এই বিতর্ক ‘উত্তর-দক্ষিণ বিতর্ক’ বা ‘নর্থ-সাউথ ডিবেট’ (North-South Dibet) নামে পরিচিত।
Post Comment