আইনসম্মত উপায়ে জল দূষণ নিয়ন্ত্রণ

আইনসম্মত উপায়ে জল দূষণ নিয়ন্ত্রণ: 1947 এবং 1977 খ্রিস্টাব্দে ‘জল দূষণ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রক’ আইন চালু করা হয়েছে। এই আইন বলে। 

 

যেসব শর্ত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তা হল- 

 

① 1974 খ্রিস্টাব্দের আইন বলে নদী, পুকুর, কূপ বা খালি জমিতে আবর্জনা ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

 

② কোনো শিল্প-কারখানার বর্জ্যপদার্থ নিক্ষেপের জন্য নতুন কোনো ইউনিট স্থাপন, পরিবর্তন বা প্রসারণ ঘটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

 

③ বিভিন্ন কলকারখানায়, শিল্প সংস্থায় ব্যবহৃত জলের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য মিটার থাকা বাধ্যতামূলক। জলদূষণের বিভিন্ন বিষয়গুলি দেখাশোনা করার দায়িত্ব ‘কেন্দ্রীয় জলদূষণ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ’ এবং ‘রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ’-র উপর থাকে। 

 

এদের প্রধান কাজগুলি হল- 

 

(1) দূষণসংক্রান্ত বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া, (i) বর্জ্যপদার্থ নির্গত করার নিয়ম ও পদ্ধতি নির্ণয় করা, (iii) দূষণের পরিমাণ নির্ধারণ করা।

 

■ জল দূষণের প্রভাব (Effects of Water Pollution):

 

জল দূযণ অপূরণীয় ক্ষতি করে প্রাণী এবং উদ্ভিদ এমনকি মনুষ্য জীবনেরও। এর বেশি ফলভোগ করতে হয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী এবং মানবসভ্যতাকে। মানুষ ও পরিবেশের ওপর জলদূষণের প্রভাব আলোচনা করা হল-

 

A. মানবজীবনে জল দূষণের প্রভাব:

 

① জল দূষণের ফলে মানবদেহে কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিস, আমাশয়, আন্ত্রিক, হেপাটাইটিস, চর্মরোগ এবং আর্সেনিক দূষণজনিত রোগ প্রভৃতি সৃষ্টি হতে পারে এবং কখনও কখনও এগুলি মহামারির আকার নেয়।

 

② লোহা, সায়ানাইড, নিকেল, পারদ, ক্লোরিন, তামা প্রভৃতি জলে মিশ্রিত হলে, ওই জল ব্যবহারের ফলে পেটের রোগ ও চর্মরোগ প্রভৃতি ঘটে। ③ অ্যাসবেস্টস জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য জলদূষণ ঘটালে ওই প্রকার জল ব্যবহারের ফলে অ্যাসবেস্টোসিস, ক্যানসার প্রভৃতি রোগ হয়। ④ জল পরিশোধনের সময় ওই জলে বেশিমাত্রায় ক্রুফুওরিন মিশ্রিত হলে এবং ওই জাতীয় দূষিত জল পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হলে, মানবদেশে

অ্যালার্জি, বৃক্কের রোগ, প্যারালাইসিস, অস্থিবিকৃতি প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়।

 

B. মৃত্তিকার ওপর জল দূষণের প্রভাব:

 

① দুষিত জল কৃষিকার্যে ব্যবহৃত হলে অনেক সময় মৃত্তিকাতে বসবাসকারী জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়ার ক্ষতি হয়, ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা শক্তির ক্ষতি হয়

 

② দূষিত ভৌমজল অনেকক্ষেত্রে মৃত্তিকাতে ক্ষারের পরিমাণ বাড়ায়। এর ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস পায়।

 

③ দূষিত জল উদ্ভিদদেহে শোষিত হলে তা উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ফলে উদ্ভিদের শস্য উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং শস্যের গুণগত মানও খারাপ হয়।

 

  1. সামুদ্রিক পরিবেশের ওপর জল দূষণের প্রভাব:

 

① সমুদ্রের জলে অপরিশোধিত তেল মিশে গিয়ে যে দূষণ ঘটায় তার ফলে মাছসহ অন্যান্য সামুদ্রিক জীব মারা যায়।

 

② অনেক সময় জল দূষিত হওয়ার ফলে জলজ উদ্ভিদের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ জমা হয়। যেমন-ন্যাপথলিন, ফেনানথ্রিন, বেঞ্চোপাইরিন ইত্যাদি। 

 

③ জল দূষিত হলে নিৰ্দ্দিষ্ট অঞ্চলের সামুদ্রিক বাস্তুরীতি বিঘ্নিত হয়। পাখিদের পালকের জলরোধী ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে পাখিদের শারীরিক উন্নতা হ্রাস পায়। পাখিরা মারা যায়। এই অবস্থাকে বলে হাইপোথারমিয়া (Hypothermia) ।

Post Comment

You May Have Missed