হরপ্পা সভ্যতার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য 2024

উত্তর:- আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর অগে ভারতে প্রথম সভ্যতার উদয় হয়। এই সভ্যতার উদয় হয়েছিল সিন্ধু উপত্যকা ও অন্যান্য কয়েকটি অঞ্চলে। এই সভ্যতা সুপ্রাচীন চৈনিক, মিশরীয় ও সুমেরীয় সভ্যতার সমসাময়িক। ইতিহাসে এই সভ্যতা হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতা নামে পরিচিত। খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত তথ্যাবলী বিশ্লেষণ করে হরপ্পা সভ্যতার নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি জানা যায়।

হরপ্পা সভ্যতার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য

◆(১) নগর পরিকল্পনা:

হরপ্পা সংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল তার নগর

পরিকল্পনা। মহেঞ্জোদারো, হরপ্পা, চানহুদাড়ো, লোথাল, কালিবঙ্গান ও বানাওয়ালীর মতো উন্নত মানের নগরগুলি এই পর্বেই গড়ে উঠেছিল। নগরগুলির গঠন ও বিন্যাস দেখে মনে হয় নগর পরিকল্পনা তখন পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রাথমিক স্তরে ছিল না, অনেক উন্নতমানের ছিল। শহরগুলির মধ্যে প্রধান ছল মহেঞ্জোদাড়ো ও হরপ্পা।

◆(২) নদীমাতৃক:

হরপ্পা সভ্যতাটি ছিল নদীমাতৃক। হরপ্পা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সিন্ধু নদের উপত্যকায় ইরাবতীর তীরে আর মহেঞ্জোদারো সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সিন্ধু নদের তীরে। হরপ্পা সভ্যতা নদীমাতৃক হবার মূল কারণ ছিল নদী সারা বছর ধরে জলের প্রয়োজন মেটায়। তাছাড়া নদী কৃষি ও বাণিজ্যিক পক্ষে সহায়ক।

◆(৩) তাম্র ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা:

হরপ্পা সভ্যতা হল তাম্র ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা।হরপ্পা সভ্যতা হল এমন এক যুগের সভ্যতা, যখন বিভিন্ন হাতিয়ার বা জিনিসপত্র তৈরির কাজে পাথরের পরিবর্তে তামা ও ব্রোঞ্জের ব্যবহার করা হয়েছে।

(৪)জীবিকা:

হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি। নদীর জল ও ভুগর্ভস্থ জল কৃষিকাজে ব্যবহার করা হত। এই সময় গম, জোয়ার, বাজরা, তুলা প্রভৃতি চাষ হত। চাষের কাজে ব্যবহৃত হত ষাঁড়।

◆(৫) পশুপালন:

কৃষির ন্যায় পশপালনও বহু মানুষের জীবিকা ছিল। খাদ্যের প্রয়োজনে পালিত পশুর মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস মুরগী ইত্যাদি ছিল। পরিবহনের জন্য পোষ মানানো হয়েছিল গাধা, উট, হাতি, বলদ ইত্যাদি পশুকে। শখ করে মানুষ বিড়াল, কুকুর ও বিভিন্ন পাখি পুষত।

◆(৬) শিল্পকর্ম:

জীবন ধারণের প্রয়োজনে বিভিন্ন শিল্পী ও কারিগর সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব হরপ্পা সমাজে ছিল। শিল্পকে কেন্দ্র করে বিশেষজ্ঞ শ্রেণির উদ্ভব হয়েছিল।

যেমন-মৃৎশিল্পী, চর্মকার, স্বর্ণকার, রাজমিস্ত্রী প্রভৃতি। ঝিনুকের মালা ও নৌকা নির্মাণ শিল্পী প্রমুখ অর্থনীতিতে নিজ নিজ প্রাধান্য স্থাপন করেছিল। টেরাকোটা শিল্পের আদলে বহু নগ্ন নারীমূর্তি এই যুগের শিল্পীরা তৈরি করেছিল।

• মূল্যায়ন:

সিন্ধুবাসীদের যে সাংস্কৃতিক দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায় তার ভিত্তিতে সিন্ধু সভ্যতাকে মিশর ও সুমেরীয় সভ্যতার চেয়ে উন্নত বলা যায়। তবে সিন্ধুসভ্যতা উদার ছিল না, রক্ষণশীল ছিল। তাই মেসোপটেমীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও সেখানকার সংস্কৃতি সিন্ধুবাসীদের প্রভাবিত করতে পারেনি।

Post Comment

You May Have Missed