তাম্র প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য লেখ 2024
উত্তর:- খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের শেষদিকে ইউরোপে এবং নিকট প্রাচ্যে তাম্রযুগের সূচনা ঘটে। তাম্রযুগে প্রবেশের মধ্য দিয়ে নগরসভ্যতার সূচনা হয়। তবে তাম্রযুগে পাথরের ব্যবহারও চলমান ছিল। তামার ব্যবহার ছিল সভ্যতার নতুন সংযোজন। এই অবস্থাকে তাম্র প্রস্তর যুগ নামে আখ্যায়িত করা হয়।
■ তামার ব্যবহার:
মানুষের প্রথম ব্যবহৃত ধাতু হল তামা। ধারণা করা হয় যে কৃষিযুগে মাটির হাঁড়ি পোড়াতে গিয়ে প্রথম তামা আবিষ্কৃত হয়। কারণ মালাকাইট (তামার আকর) পুড়লে তামা গলে আলাদা হয়ে বেরিয়ে আসে। প্রাচীন মিশর, সিরিয়া ও অ্যাসিরিয়ার অধিবাসীরা ব্যাপকভাবে তামার ব্যবহার জানত। বস্তুত সুমেরের নগরসভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছিল তামা ব্যবহারের মধ্য দিয়ে।
■ তাম্র প্রস্তর যুগীয় সংস্কৃতি:
তাম্র প্রস্তর যুগের অধিবাসীরা ভারতবর্ষে প্রথম গ্রাম গড়ে তুলেছিল। শুধু তাই নয় নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষদের চেয়ে তারা অনেক বেশি খাদ্যশস্য উৎপন্ন করতেও সক্ষম হয়েছিল। পশ্চিম ভারতে উৎপন্ন হত গম, মুসুর ডাল। দক্ষিণ ও পূর্বভারতে উৎপন্ন হত ধান। তাম্র প্রস্তর যুগে প্রায় সমস্ত অধিবাসী চাকার সাহায্যে তৈরি লাল কালো মাটির পাত্র ব্যবহার করত। এরাই প্রথম চিত্রাঙ্কিত পাত্র ব্যবহার করেছিল। রান্না, খাওয়া দাওয়া এবং সংরক্ষণের কাজে এই পত্রগুলি ব্যবহৃত হত। তারা লোটা বা ঘটির ব্যবহার করতেন কিন্তু থালার ব্যবহার করতেন না।
■ গুরুত্ব:
পাথরের পরিবর্তে তামার হাতিয়ার ও জিনিসপত্র ব্যবহারের কারণে শ্রমের উৎপাদন শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলে মানব সভ্যতায় প্রথম অর্থনৈতিক শ্রেণিবিভাগ সৃষ্টি হয়। তামা বিক্রি করে কিছু লোক প্রচুর ধনসম্পদের মালিক হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রেণিবিভক্ত সমাজে শক্তিশালী রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের বিকাশ ঘটে।
• মূল্যায়ন:
তাম্র প্রস্তর যুগীয় সংস্কৃতি ছিল মূলত গ্রামীণ। এই পর্যায়ে তামার ব্যবহার ছিল সীমাবদ্ধ। ব্যবহৃত তামার মানও খুব উন্নত ছিল না। টিনের সঙ্গে তামা মিশিয়ে ব্রোঞ্জ নামক মজবুত ধাতু তৈরি করার কৌশল এই যুগের মানুষের জানা ছিল না। মানুষ খাদ্য উৎপাদন করলেও এ যুগে শিশুমৃত্যুর হার ছিল অত্যন্ত ব্যাপক। পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব, ডাক্তারি জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রভৃতি যেকোনো কারণে এত শিশুমৃত্যু ঘটত বলে মনে হয়।
Post Comment