মধ্যপ্রস্তর যুগের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো | Discuss the cultural features of the Mesolithic period.
উত্তর : বিবর্তনের পথ ধরে জুরাসিক যুগ, তুষার যুগ প্রভৃতি অতিক্রম করে মানুষ এক সময় প্রস্তর যুগে এসে পৌঁছায়। আনুমানিক খ্রিসটপূর্ব ২,৬০,০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪,০০০ অব্দ পর্যন্ত সময়কালকে প্রস্তরযুগ হিসাবে ধরা হয়। প্রস্তরযুগকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা (ক) প্রাচীন বা পুরাপ্রস্তর যুগ (খ) মধ্যপ্রস্তর যুগ (গ) নবপ্রস্তর যুগ।
Contents
মধ্যপ্রস্তর যুগের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য
■ মধ্যপ্রস্তর যুগ :
( মধ্য মধ্যপ্রস্তর যুগ হল প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং নব্যপ্রস্তর যুগের মধ্যবর্তীকাল। মধ্যপ্রস্তর যুগের বিস্তৃতি ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ থেকে ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত।
■ মধ্যপ্রস্তর যুগের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য: মধ্যপ্রস্তর যুগের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ-
(১) সমাজজীবন:
মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষ ছিল আধা যাযাবর, আধা স্থায়ী। এই যুগের মানুষ মূলত দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি শাখা নদী ও সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে এবং অন্য শাখাটি মূল ভূমিতেই বসবাস করত। মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে বসবাস করত। আন্ত ও আন্তঃদলীয় সম্পর্ক ভালো ছিল।
◆(২) খাদ্য:
মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রহকারী। তখনো তারা খাদ্য উৎপাদন করতে শেখেনি। তাদের প্রধান খাদ্য ছিল পশুপাখি ও মাছ। মাছকে শুটকি করে তারা সংরক্ষণ করত। মাছ ছাড়াও তারা বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীকে খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
(৩) হাতিয়ার:
মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষ পূর্বের তুলনায় হাতিয়ারের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। এ িসময়ে প্রধান অস্ত্র ছিল তীর ধনুক। এই সময় মৎস্য শিকারে বঁড়শি, হারপুন, নৌকা, জাল ব্যবহৃত হতী হস্তকুঠার ছাড়া অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রে কাঠের হাতল সংযুক্ত করেছিল। পশুর হাড়, শিং ইত্যাদি দিয়েও অস্ত্র তৈরি হত।
◆(৪) বসতি:
মধ্যপ্রস্তর যুগের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল বসতি। এই যুগে অনেকে গুহায় বসবাস করলেও এই যুগেই প্রথম কুটির নির্মাণের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল। এলাহাবাদের কাছে বেলান উপত্যকায় মধ্যপ্রস্তর যুগের একটি কুটির আবিষ্কৃত হয়েছে। আশেপাশে আরো বারোটি কুটির খুঁজে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কয়েকটির আকৃতি গোল এবং কয়েকটি আকৃতি ডিম্বাকৃতি। কিছু কুটিরের চারপাশে বড়ো বড়ো প্রস্তর খণ্ড দিয়ে ঘেরা।
◆(৫) পোষাক :
মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষ পোশাক হিসাবে গাছের ছাল ও পশুর চামড়া ব্যবহার করত। এই সময় সম্ভবত পশুচর্ম সেলাই করার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছিল। এই সময় হাড় ও পাথরের অলংকার ব্যবহৃত হত।
◆(৬) গুহাচিত্র:
মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষ গুহাচিত্র অঙ্কনে পারদর্শী হয়ে উঠেছিল। তাদের অঙ্কিত ছবিগুলিতে জ্যামিতিক জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। কারণ কোনো ছবি ছিল ত্রিকোণাকার, কোনোটি চতুষ্কোণাকার আবার কোনোটি বৃত্তাকার। ছবিগুলির
বিষয়বস্তু মূলত শিকারের দৃশ্য। ছবিগুলিতে বাদামী, হলদে, সবুজ ইত্যাদি রঙের ব্যবহারও লক্ষ্য করার মতন।
◆(৭) মৃৎপাত্র:
গুজরাটের লঙ্ঘনাজ অঞ্চলে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলির ভিত্তিতে
প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মনে করেন মধ্যপ্রস্তর যুগের শেষের দিকে মানুষেরা মাটির বাসনপত্র হাতে তৈরি করতে শিখেছিল।
◆(৮) আগুনের ব্যবহার:
মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষেরা আগুনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে। এই সময় চুল্লি তৈরির কাজও শুরু হয়।
◆(৯) পশুপালন:
মধ্যযুগের মানুষরা পশুপালন করত। এই সময় মানুষ ভেড়া
ও ছাগলকে বশে আনতে শুরু করেছিল। গরুকেও পোষ মানাতে শুরু করেছিল।
◆(১০) ধর্ম:
মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষ ধর্ম ও জাদুবিদ্যায় বিশ্বাসী ছিল। সর্বপ্রাণবাদ, মহাপ্রাণবাদ, বস্তুভক্তি ও পূর্বপুরুষ পূজা ছিল তাদের ধর্ম সংক্রান্ত মূল মতবাদ। ◆(১১) সমাধি প্রথা: মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষকে সমাধিস্থ করা হত। সমাধিতে
অলংকার, পোষাক, খাদ্য প্রভৃতি থাকত। এর থেকে অনুমান করা হয় যে মৃত্যুর পরবর্তী কোনো জীবন সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস ছিল।
• মূল্যায়ন:
মধ্যপ্রস্তর যুগের মানবকুল পুরাপ্রস্তর যুগের মানুষের চেয়ে সবদিক
দিয়েই উন্নতি করেছিল। তবে মধ্যপ্রস্তর যুগে সংস্কৃতির অগ্রগতি সর্বত্র একই হারে হয়নি।
Post Comment