সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো: (ক) চন্দ্রাবতীর রামায়ণ, (খ) অদ্ভুত

উত্তর: (ক) চন্দ্রাবতীর রামায়ণ: কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রভাবে অনেক কবিই রামায়ণ অনুবাদ করেন। কৃত্তিবাসের পদাঙ্ক অনুসরণ করে শতাধিক কবি রামায়ণ রচনায় প্রয়াসী হন। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত ‘মনসামঙ্গল’ কাব্য রচয়িতা দ্বিজবংশী বা বংশীদাস চক্রবর্তীর কন্যা চন্দ্রাবতী গীতিকাব্যের আকারে রামায়ণ রচনা করেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার পাটওয়ারী গ্রামের অধিবাসী। বংশীদাস চন্দ্রাবতী ও তাঁর প্রণয়ী জয়চন্দ্রের সাহায্যে মনসার ভাসান গান…

শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্যের অভিনবত্ব বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: মহামুনি বেদব্যাস অষ্টাদশ পুরাণের রচয়িতা বলে বিখ্যাত। ‘ভাগবত’-এই আঠারোটি পুরাণের অন্যতম। মালাধর বসু এই সংস্কৃত ভাগবত পুরাণের বঙ্গানুবাদ করেন। তবে তিনি সম্পূর্ণ অনুবাদ না করে দশম ও একাদশ স্কন্দেরই অনুবাদ করেন। তাঁর এই অনুবাদ কাব্যের নাম ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’। ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ মালাধর বসুর পাঁচালি আকারে রচনা। উদ্দেশ্য ছিল লোক সাধারণের   সুর করে গান করা, তা হলে…

 অনুবাদক হিসেবে কবি কৃত্তিবাসের কৃতিত্ব আলোচনা করো।

উত্তর: কবি কৃত্তিবাস সংস্কৃতে পণ্ডিত এবং নানা পুরাণ সম্পর্কে অভিজ্ঞ ছিলেন। তিনি বাল্মিকী রামায়ণের মূল কাহিনীর সারবস্তু নিয়ে পুরাণ ও অন্যান্য রামায়ণ থেকে কিছু বিষয় নিয়ে আপন মনের কল্পনা মাধুরী মিশিয়ে আর্য রামায়ণকে বাঙালি মানসের মতো করে এক রামায়ণ রচনা করেছিলেন। অনেকেই রামায়ণ রচনা করলেও কৃত্তিবাসের রামায়ণের পুঁথি বেশি পাওয়া গিয়েছে। রামায়ণের কৃত্তিবাস তাঁর নানা…

টীকা লেখ : শ্রীকৃষ্ণবিজয়

‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ অনুবাদ সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য নাম। কবি কৃত্তিবাসের অনুসরণে ভাগবত পুরাণের অনুবাদ করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন বর্ধমানের কুলিনগ্রাম নিবাসী কবি মালাধর বসু। তাঁর পিতার নাম ভগীরথ, মাতার নাম ইন্দুমতি। তাঁর পুত্র সত্যরাজ খান বা রামানন্দ বসু। কাব্যটি রচনা করেন ১৪৭৩ খ্রিস্টাব্দের শেষে, গ্রন্থটি প্রকাশ হয়েছে ১৪৭৩-১৪৮০ খ্রিস্টাব্দে। এই গ্রন্থে শ্লোক আছে ১৮ হাজার।   ১৮…

 ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্য ও চণ্ডীদাস সমস্যা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

উত্তর: বহুদিন ধরে চণ্ডীদাসের পদাবলী বৈষ্ণব সম্প্রদায় আস্বাদন করেছিল। বাংলা ১৩২৩ সালে বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি প্রকাশিত হয়। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকীর্তন আবিষ্কৃত হলে চণ্ডীদাস নাম নিয়ে একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়। ১৩০৫ সালে নীলরতন মুখোপাধ্যায় আর ১৩২১ সালে ব্যোমকেশ মুস্তাফী চণ্ডীদাসের ভণিতাযুক্ত কিছু কিছু অপকৃষ্ট পদ প্রকাশ করেন। সেই থেকে চণ্ডীদাস সম্পর্কে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত। বসন্ত…

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের নাম সম্পর্কে যে সমস্যা রয়েছে, তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।

  উত্তরী শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের নাম নিয়ে সন্দেহ দেখা যায় কারণ পুথিটির আগে ও পরে কিছু পাতা খুঁজে পাওয়া যায় না। বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ পুথিটিকে পড়ে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য নাম দিয়ে প্রকাশ করেন। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নাম সম্পর্কে প্রথম সংশয় উত্থাপিত হয় সাহিত্য-পরিষদ পত্রিকায়। ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের চতুর্থ সংখ্যায় রমেশ বসু লিখিত ‘চন্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ শীর্ষক প্রবন্ধে রচয়িতা নামকরণের বিষয়ে সন্দেহ…

 টীকা লেখো: কৃষ্ণাচার্য (কাহ্ন পা)

উত্তর: মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ড. বিনয়ঘোষ ভট্টাচার্য, ড. মহম্মদ শহীদুল্লাহ, রাহুল সাংকৃত্যায়ন ও অধ্যাপক সুখময় মুখোপাধ্যায় তিব্বতী ভাষার নানা গ্রন্থ অবলম্বনে চর্যাকারদের আবির্ভাবকাল ও পরিচয় নিরূপণের চেষ্টা করেছেন। মূল গানে ও টীকায় পদকর্তার নাম যেভাবে উল্লেখিত হয়েছে তাতে মোট ২৩ জন কবির সন্ধান পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি গান পাওয়া গিয়েছে কাহ্ন ভনিতায়। তবে কাহ্ন নামাঙ্কিত…

 চর্যার আদিকবির পরিচিতি দাও।

  উত্তর: মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আবিষ্কৃত ও সম্পাদিত ‘চর্যাগীতিকোষ’-এ মোট কবির সংখ্যা বাইশ। তাঁদের মধ্যে ‘কাহ্ন’ নামটি বিভিন্ন নামে পাওয়া গিয়েছে। টাকাতে প্রতিটি নামের শুদ্ধ বা পুরো নাম আছে ‘পাদ’ যোগ করে। যেমন কাহ্নপাদ, সরহপাদ, ভুসুকুপাদ প্রভৃতি। খণ্ডিত পুঁথির মধ্যে ৪৬টি সম্পূর্ণ ও একটি গান খণ্ডিত পাওয়া গিয়েছে। এই চর্যাগীতি সংগ্রহের প্রথম কবি লুইপাদ। যতগুলি…

টীকা লেখো: চর্যার ঐতিহাসিক মূল্য:

উত্তর: বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদ আবিষ্কারের গুরুত্ব অসীম। পূর্বে মনে করা হত কৃত্তিবাসী রামায়ণই বাংলা ভাষার আদিতম নিদর্শন। চর্যাপদ এবং আদিযুগের ‘সদুক্তিকর্ণামৃত’, ‘প্রাকৃতপৈঙ্গল’, ‘মানসোল্লাস’ ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে ভাষার প্রাচীনত্ব নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। শুধুমাত্র সাহিত্যের সেতুবন্ধন ছাড়াও চর্যাপদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অসীম। বাঙালির ইতিহাস রচনা করার কালে একাদশ শতকের লৌকিক সমাজজীবনের পরিচয় চর্যাপদগুলি থেকে সংগ্রহ করা যায়।…

 চর্যাগীতি: নামকরণ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তর: ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা’ প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থটি প্রকাশের সময় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যার পুথিটিকে ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ নামে প্রকাশ করলেও এটি অন্যান্য বেশ কিছু নামে যেমন ‘চর্যাচর্যটীকা’, ‘চর্যাশ্চর্য্যাবিনিশ্চ’, ‘চর্যাগীতিকোষবৃত্তি,’ ‘চর্যাচর্য্যটাকা, ‘আশ্চর্য্যচর্যাচয়’ হিসাবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।   মূল প্রাপ্ত পুথিটির নাম যে, ‘চর্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়’…