“চর্যাপদের নামকরণ সম্পর্কে আলোচনা করো ২০২৪ | Charjapader Namkoron Samparke Alochona Koro 2024
চর্যাপদের নামকরণ সম্পর্কে আলোচনা করো ২০২৪ | Charjapader Namkoron Samparke Alochona Koro 2024
উত্তর: বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের নিদর্শন চর্যাপদাবলী, এটির রচনাকাল দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে নেপালের রাজদরবারের পুঁথিশালা থেকে তিনটি পুঁথির সঙ্গে চর্যাপদের পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করেছিলেন। অন্য পুথি তিনটি হল অন্বয়বজ্রের সংস্কৃত টীকাসহ সরোজবজ্রের দোহাকোষ, সংস্কৃত টীকা মেখলাসহ কৃষ্ণাচার্যের দোহাকোষ, সংস্কৃত রচনাংশ সম্বলিত ডাকার্ণব। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত এই সবকয়টি পুঁথিকে বাংলার সাহিত্যে অন্তর্ভুক্ত করেন।
তিনি ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে (১৩২৩ বঙ্গাব্দ) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সৌজন্যে, উল্লিখিত দোহাকোষ দুটি সহ ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোঁহা’ নাম দিয়ে চর্যাপদের সম্পাদনা করেন। পরে তিনি পুঁথির অন্তর্নিহিত ইঙ্গিত অনুসরণ করে নাম পাল্টে গ্রন্থটির নামকরণ করলেন ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’। চর্যার সংস্কৃত টীকাকার মুনিদত্তের অনুসরণে কোনো কোনো সমালোচক এর নামকরণ করতে চেয়েছেন ‘আশ্চর্য চর্যাচয়’। পুঁথিটির আজ পর্যন্ত নয়টি নামের হদিশ পাওয়া গিয়েছে।
চর্যার প্রবীণ গবেষক বিধুশেখর শাস্ত্রী পুঁথির মধ্যে ‘আশ্চর্য্যচর্যাচয়’ নামটি পেয়েছিলেন। তাই বিধুশেখর শাস্ত্রী নাম দিলেন ‘আশ্চর্য্যচর্যাচয়’। ড. প্রবোধ বাগচী এই পুঁথির একটি তিব্বতী অনুবাদ আবিষ্কার করেছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালে তিনি পুঁথিটিকে ‘চর্যাপদ’ বলে উল্লেখ করলেন।
কিন্তু তিব্বতী টীকাকারের সাক্ষ্যে সঠিক নাম ‘চর্যাগীতিকোষ’। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, চর্যার তিব্বতী টীকাকারের নাম তারানাথ। ১৯৫৬ সালে ড. বাগচী শান্তি ভিক্ষুর সঙ্গে একত্রে সম্পাদনা করলেন ‘চর্যাগীতিকোষ’ নামে। তিনি বললেন, মুনিদত্তের সংস্কৃত টীকার তিব্বতী অনুবাদকার কীর্তিচন্দ্র মুনিদত্তের টাকার নাম ‘চর্যাগীতিকোষ বৃত্তি’। এই ‘বৃত্তি’ শব্দের অর্থ ‘টাকা’। মূল পুঁথির নাম ‘চর্যাগীতিকোষ’। তাই হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর পুঁথির নাম হবে ‘চর্যাগীতিকোষ’। ‘কোষ’ মানে সংগ্রহশালা। যদি ‘কোষ’ শব্দটি বাদ দিই তবে পুঁথির এক একটি গানের নাম হয় ‘চর্যাগীতি’। ড. সুকুমার সেন পুঁথির নাম দিয়েছিলেন ।
‘চর্যার্থীতি পদাগনী’। তিববর্তী অনুবাদ হিসেবে এই পুঁথির একটি গান ‘চর্যাগীতি’। বাংলার
বৈষ্ণব পদাবলী অনুসরণে নাম তাই ‘চর্যাগীতি পদাবলী’। মূল প্রাপ্ত পুথিটির নাম যে ‘চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয়’ ছিল, তার প্রমাণ নেই। মুনিদণ্ডের গ্রন্থের প্রারম্ভিক শ্লোকে উল্লেখ করা-অপাশ্চির্য্যচর্যাচরা’- এর মধ্যেকার আশ্চর্য শব্দন্তি উপর গুরুত্ব দিয়ে বা চর্যার ‘আশ্চর্যবিনিশ্চয়’ অর্থাৎ তার অদ্ভুত অর্থ বের করতে পেরে চর্যার ‘চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয়’ নামটি দেওয়া। তাই মনে হয় না টাকা গ্রন্থটির এই নাম ছিল। আবার, P. Cordion-এর তেঙ্গুর গ্রন্থাবলী তালিকা থেকে জানা যায় মুনিদত্তের গ্রন্থটির নাম ‘চর্যাগীতিকোষবৃত্তি’। মুনিদত্তের টাকা করা বইটির এই নাম হলে মূল গ্রন্থটি এই মতানুসারে ‘চর্য্যাগীতিকোষ’ নামে পরিচিত। তবে নাম যাই হোক না কেন ‘চর্যাপদ’ নামেই গ্রন্থটি বর্তমানে পরিচিত ও গৃহীত হয়েছে। বস্তুত, চর্যাগীতির নাম নিয়ে অসংখ্য মতান্তর খুঁজে পাই-তাই এই তর্কটির সরল মীমাংসা পরিসীমিত আলোচনায় করা অসম্ভব।