সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো: কাশীরামের মহাভারত, পরাগলি মহাভারত
উত্তর: কাশীরামের মহাভারত কবি মধুসূদন দত্ত বলেছেন-
‘মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
-হে কাশী, কবীশ দলে তুমি পুণ্যবান।।’
– এই শ্রদ্ধার্ঘ বুঝিয়ে দেয় কাশীরাম বড়ো কবি ছিলেন। কাশীরাম দাসের মহাভারতের নাম ‘ভারত পাঁচালী’। এটি অনুবাদমূলক গ্রন্থ। আনুমানিক ১৬০৪ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশ পায়।
কাশীরাম দাস সংস্কৃতের জটাজাল থেমে মুক্ত করে বাঙালীর জন্য উপযোগী করে সহজ সরল বাংলায় মহাভারতের কাহিনীকে পরিবেশন করেছেন। কাশীরাম মূল মহাভারতের কাহিনী যেমন গ্রহণ করেছেন তেমনি অনেক কাহিনী বর্জন ও স্বীয় কল্পনাবলে অনেক নূতন কাহিনী সংযোজন করেছেন। কবি মূল মহাভারতের আদি পর্ব, সভা পর্ব, বন পর্ব ও বিরাট পর্বের কিছুটা রচনা করেছেন। কাশীরাম দাস মহাভারতের প্রথম চার পর্বের মূল কাহিনীকে খুব সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন। পর্বের নামকরণ ও পর্ববিভাগ করেছেন স্বাধীনভাবে। মহাপ্রস্থান এবং স্বর্গারোহণ পর্ব দুটি কাশীরাম এক করে স্বর্গারোহণ পর্ব নামে চিহ্নিত করেছেন। অর্জুনের লক্ষ্যভেদ, সুভদ্রার রূপ বর্ণনা অংশে মৌলিকতা দেখিয়েছেন।
কবি সংস্কৃতে পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। রচনা সংস্কৃত প্রভাবিত হলেও কখনও গতি হারায়নি। তত্ত্ব, নীতি ও দর্শনের কথা ছেড়ে গল্পের ধারা অনুসরণ করেছেন। বাঙাল জীবনের উপযোগী করে মহাভারতকে আমাদের সামনে এনেছেন। বীররসের কাব্যে ভক্তিরস ও করুণরস যোগ করেছেন। বাঙালীর প্রাণের কথা কাশীরাম তাঁর কাব্যে পরিবেশন করেছেন। চৈতন্য প্রভাবিত বৈষ্ণব মাধুর্য তাঁর কাব্যে পাওয়া যায়। পরাগলি মহাভারত ষোড়শ শতকে কবীন্দ্র পরমেশ্বরের অনূদিত মহাভারতের নাম ‘পাণ্ডব বিজয়’। এটি অনুবাদমূলক রচনা। ১৪৯৩-১৫৩২ খ্রী: অনুদিত। হুসেন শাহ ত্রিপুরা এবং চট্টগ্রাম বিজয়ের জন্য নুসরৎ শাহকে পাঠিয়েছিলেন বিশ্বস্ত সেনাপতি রাস্তিখানের পুত্র পরাগল খানকে সঙ্গে নিয়ে। মুসলমান পরাগল খান মহাভারতের কাহিনী জানেন না তাই তিনি একদিনে শুনে শেষ করা যাবে এমন সংক্ষিপ্ত মহাভারতের কাহিনী কবীন্দ্র পরমেশ্বরকে লিখতে বলেন। সুলতানের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য কবি মূল মহাভারতের তত্ত্ব অংশকে মহাভারতে স্থান দেননি। কখনও জৈমিনি মহাভারতের সাহায্য নিয়েছেন। পরাগল খাঁর নির্দেশে ‘মহাভারত পাঁচালি’ রচিত হয়েছিল বলে পরমেশ্বরের অনুবাদ ‘পরাগলী মহাভারত’ নামে পরিচিত। কাব্যে ফারসী শব্দের তেমন ব্যবহার নেই। পয়ার ত্রিপদী ছন্দে গ্রথিত করলেন। রাজনির্দেশে মহাভারত লিখলেও স্বকীয় কল্পনা স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছেন।