শাহ মুহম্মদ সগীরকে বাংলা প্রণয়োপাখ্যানের প্রথম কবি বলার। যৌক্তিকতা সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর : মধ্যযুগে রোমান্টিক প্রণয়মূলক কাহিনী কাব্য ‘ইউসুফ জোলেখা’ রচনা করেছেন। শাহ মুহম্মদ সগীর। তিনি পঞ্চদশ শতকের কবি। ‘ইউসুফ জোলেখা’ কাব্যের উপক্রম।
অংশের ‘রাজপ্রশস্তি’-তে বলা হয়েছে- “মানুষের মধ্যে জেহ্ন ধর্ম অবতার। মহা নরপতি গোছ পৃথিবীর সার।।মোহম্মদ ছগির তান আজ্ঞা অধীন। তাহান আছক জস ভুবন এতিন।।”
‘মহা নরপতি গোছ’ হলেন গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ (১৩৯১-১৪১০ খ্রি অনুমান করা যেতে পারে পঞ্চদশ শতাব্দীর সূচনায় শাহ মুহম্মদ সগীর ‘ইউসুফ জোলে রচনা করেন। এই কাব্য দিয়ে মধ্যযুগীয় দেবধর্মের স্থানে মানব ধর্ম জাতীয় কাব্যধা সূচনা হয়। তাই বলা যেতে পারে সগীর এই কাব্যধারার প্রবর্তক।
‘ইউসুফ জোলেখা’ একটি আখ্যান কাব্য। যেখানে সুফী ধর্ম ও দর্শনের প্রভাব দেখা যায়। মরমীয়া সুফী সাধকেরা কোরাণের আদর্শে ধর্মকে এবং জীবনকে দেখেছেন। স্রষ্টার মধ্যে সৃষ্টির বিকাশকে কেন্দ্র করে সুফী প্রেমের বিকাশ। তাই কবি বলেছেন- ‘মোহম্মদ ছগির ভণে বিরহ কাহিনী’।
শাহ মুহম্মদ সগীর রাজকর্মচারী ছিলেন এবং আদবকায়দা সম্বন্ধে যে তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল ‘রাজদর্শনের কায়দা’-তে তা প্রমাণিত। কাব্যের ভাষাতে কিছু প্রাচীন রূপ মেলে। সতেরো শতকের কবি রজ্জাকনন্দন আবদুল হাকিকম জামীর অনুসরণে ইউসুফ জোলেখা কাব্যটি রচনা করেন। আঠারো শতকে রচনা করেছেন মঙ্গল কাব্যের আদলে ফকির গরীবুল্লাহ। এঁদের তিন কাব্যে পার্থক্য ভালোভাবে চোখে পড়ে। এই কারণে আমরা শাহ্ মুহম্মদ সগীরকে প্রাচীনতম কাব্যের রচয়িতা বলে মনে করি। কাব্যের তিনটি প্রতিলিপি পাওয়া গিয়েছে চট্টগ্রামে এবং একখানা ত্রিপুরা থেকে সংগৃহীত। সগীরের কাব্যে অনুবাদের কোনো ছাপ নেই। দেশী রীতিনীতি, বিশ্বাস সংস্কার, বসন-ভূষণ, পার্বণ বর্ণিত হয়েছে। তাঁর কাব্যে আল্লাহ্ বা স্রষ্টা অর্থে ‘ধর্ম’ ব্যবহৃত হয়েছে। এটাও প্রাচীনতার তথা বৌদ্ধ প্রভাবের নিশ্চিত নিদর্শন।