মালাধর বসুর ভাগবতের অনুবাদ গ্রন্থটির নাম কী? উত্ত গ্রন্থ রচনায় তাঁর কৃতিত্ব আলোচনা করো।
উ: মালাধর বসুর ভাগবতের অনুবাদ গ্রন্থটির নাম ‘শ্রীকৃষ্মবিজয়’।
রামায়ণ ও মহাভারত মহাকাব্য। কিন্তু মধ্যযুগে একখানি পুরাণেরও অনুবাদ হয়েছিল। এটি শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ। ভাগবতের কিয়দংশের প্রথম অনুবাদক কুলীন গ্রামবাসী মালাধর বসু। তিনি প্রাক-চৈতন্যযুগের এক বিখ্যাত কবি। ভাগবতকে বৈশ্বব সমাজ ও সম্প্রদায়ের উপনিষদ অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ বলা হয়। মালাধর বসু সেই গ্রন্থের অংশবিশেষ সরল বাংলায় অনুবাদ করে এদেশে বৈশ্ববমতের প্রথম সূচনা করেন।
ভাগবতে দ্বাদশটি পর্ব থাকলেও মালাধর বসু শুধু দুই (১০ম ও ১১শ) পর্বের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করেন। চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের কয়েক বছর আগে মালাধর ভাগবতের দুই স্কন্ধের সরল সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করে ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ বা ‘শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল’ রচনা করেন। মালাধর বসুর ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ বিখ্যাত গ্রন্থ হলেও বৈশ্বব সমাজের বাইরে এর বিশেষ প্রচার ছিল বলে মনে হয় না। কারণ কৃত্তিবাসী রামায়ণ ও কাশীদাসি মহাভারতের যেমন অসংখ্য পৃথি
পাওয়া যায় ‘শ্রীকৃষ্মবিজয়’-এর পুথির সংখ্যা বেশি নয়। চৈতন্যদেব এই কাব্যের অতিশয় প্রশংসা
করতেন। ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’-এর ‘বিজয়’-এর অর্থ মনে হয় শ্রীকৃষ্ণের গৌরবকাহিনি বা শোভাযাত্রা বা ‘মঙ্গল’ কথা। মালাধর বসুর অনুবাদ করা দুটি পর্বের দশম পর্বে কৃষ্ণজন্ম থেকে দ্বারকালীলা পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে। একাদশ স্কন্ধে কাহিনির অংশ যৎসামান্য-কৃষ্ণের অনুত্যাগ ও যদুবংশ ধ্বংস এর প্রধান ঘটনা। এতে নানা তত্ত্বকথা, ধর্মতত্ত্ব, উদ্ধব-কৃষ্ণের আলোচনার মারফতে বর্ণিত হয়েছে।
কাহিনির দিকে গুরুত্ব দিয়ে কবি তত্ত্বাংশ অনেকটা খর্ব করেছেন বোধহয় জনসাধারণের জন্য। এদিকে গুরুত্ব দিয়ে মালাধর বসুর বিচক্ষণতা প্রশংসার যোগ্য। তিনি জানতেন নানা তত্ত্ব ও তথ্যভারে মশ্বর গোটা ভাগবত জনসাধারণের রুচিকর হবে না। তাই তিনি ভাগবতের দশম ও একাদশ স্কন্ধের সমস্ত বক্তব্যকে যথাসম্ভব সংক্ষেপে অনুবাদ করে যথেষ্ট কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।