বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আদিযুগের কালসীমা কী?
চর্যাগীতির পুঁথিটির প্রকৃত নাম কী?
‘চর্যাগীতি’।
‘চর্যাচর্য্যাবিনিশ্চয়’। এই নামটি হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর দেওয়া। কে. কত খ্রিস্টাব্দে কোথা থেকে চর্যাপদের পুঁথিটি আবিষ্কার করেন?
- মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে (১৩১৪ বঙ্গাব্দে), নেপালের দরবারের অভিলেখাগার থেকে আবিষ্কার করেন।
চর্যাপদ কে, কত খ্রিষ্টাব্দে কোথা থেকে প্রকাশ করেন? হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে, ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ (কোলকাতা) থেকে। • চর্যাপদ ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে কী নামে বের হয়েছিল?
‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামে হরপ্রসাদ যে গ্রন্থ সুসম্পাদিত করে প্রকাশ করেন, সেগুলি হলো- ‘চর্যাচর্য্যাবিনিশ্চয়’, ‘দোহাকোষ’ এবং কৃষ্ণাচার্যের ‘দোহাকোষ’ ও ‘ডাকার্নব’।
- চর্যাগীতি পদের সংখ্যা কত?
৫০টি পদ ছিল। পুথি খন্ডিত বলে মোট ৩২ টি গানে নেই (২৩ নং পদের অর্ধেক,
২৫ এবং ৪৮ নং সম্পূর্ণ পদ নেই। সুতরাং পুথিতে চর্যা আছে ৪৬২ টি। চর্যাগীতির আদি পদকর্তা কে? •
আদি সিদ্ধাচার্য হলেন লুই পাদ। তিনি মোট দুটি পদ লিখেছেন। ‘কা আ তরুবর
পঞ্চ…..’ শীর্ষক প্রথম পদটিই তাঁর লেখা।
- চর্যাগীতির শ্রেষ্ঠ পদকর্তা কে?
শ্রেষ্ঠ পদকর্তা হলেন কাহ্নপাদ। তিনি মোট ১৩টি পদ লিখেছেন। তার মধ্যে ২২টি পাওয়া যায়নি।
পাওয়া গিয়েছে। তাঁর লেখা ২৪ সংখ্যক পদটি
ভুসুক পাদ মোট কটি পদ লিখেছেন?
বি.এ. বাংলা অনার্স পরিচয়
৮টি পদ লিখেছেন।
শবর পাদ মোট কটি পদ লিখেছেন? ২টি পদ লিখেছেন।
চর্যাগীতির মোট কবির সংখ্যা কত? ২২ জন (মতান্তরে ২৪ জন)
চর্যায় ছদ্মনামযুক্ত দুজন কবির উল্লেখ কর। কুক্করী পা, ডোম্বী পা।
‘আপনা মাংসে হরিনা বৈরী।’ এই প্রবাদপ্রবচনটি কোথায় আছে? ভুসুক পাদের ৬ সংখ্যক চর্যাগীতিতে আছে।
চর্যার ভাষা যে বাংলা তা কে প্রমাণ করেন?
ড.ঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তার O.D.B.L. (Origin and Developm of Bengali Language) গ্রন্থে।
চর্যার ভাষা যে হিন্দি নয়, সেকথা কে প্রমাণ করেন?
ড. সুকুমার সেন।
চর্যাপদ বাংলা ভাষায় লেখা নয়, একথা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন এমন একজনে নাম লেখ।
বিজয়চন্দ্র মজুমদার ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকায়।
চর্যার ভাষা কোন্ উপভাষার উপর প্রতিষ্ঠিত?
পশ্চিমবঙ্গীয় বা রাঢ়ী উপভাষার উপর।
চর্যার পুঁথি কীসের উপর লেখা? তালপাতার উপর দুপৃষ্ঠে লেখা।
- ‘চর্যাগীতিকোষ’ এই নামটি কারা প্রথম ব্যবহার করেন?
প্রবোধ চন্দ্র বাগচী ও শান্তি ভিক্ষু (১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে)
- চর্যাপদের সংস্কৃত টীকাকার কে?
মুনি দত্ত। টীকার নাম- নির্মলগিরাটীকা। টীকা গ্রন্থের নাম- ‘চর্যাগীতিকোষবৃত্তি’
- চর্যার সংস্কৃত টীকার তিব্বতী অনুবাদ কে করেন? কীর্তিচন্দ্র বা চন্দ্রকীর্তি।
- চর্যাটাকার তিব্বতী অনুবাদ কে আবিষ্কার করেন? প্রবোধচন্দ্র বাগচী।
- চর্যার্টীকার তিব্বতী অনুবাদ কারা সম্পাদনা করেন?
প্রবোদচন্দ্র বাগচী ও শান্তি ভিক্ষু (বিশ্বভারতী, ১৯৫৬)।
- তিব্বতীতে মূল চর্যাগীতিকোষের অনুবাদ কে করেন?
পন্ডিত শীলচারী।
চর্যাগীতি নিয়ে গবেষণা করেছেন এমন দু’জন বিদেশীর নাম লেখ। ড. আর্নল্ড বাকে (Dr. Amold Bake), ড. জি. তুসি. (Dr. G. Tuci)।
1
চর্যার দুজন বাঙালি গবেষকের নাম লেখ।
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. সুকুমার সেন।
- চর্যার উপর গবেষণা করেছেন এমন কয়েকজন অবাঙালি ভারতীয়দের নাম লেখ।
রাহুল সাংকৃত্যায়ণ, ধর্মবীর ভারতী, রামকৃষ্ণ শুক্লা, বিশ্বনাথ প্রসাদ মিশ্র।
- চর্যাগীতির পুথি কোন্ হরফে লেখা?
দেবনাগরী হরফে লেখা।
- চর্যাপদের ফটোমুদ্রণ কে প্রকাশ করেন?
ড. নীলরতন সেন।
- চর্যার কোন্ লিপি ব্যবহার করা হয়েছে?
প্রাচীন বাংলা লিপি। এই লিপিকে কেউ কেউ বলেন ‘কুটিল লিপি’।
- চর্যার ভাষায় কোন্ অপভ্রংশের লক্ষণ আছে?
সৌরসেনী অপভ্রংশের।
- চর্যায় ব্যবহৃত প্রধান ছন্দ কী?
পাদাকুলক ছন্দ।
- চর্যায় ব্যবহৃত কয়েকটি রাগ-রাগিনীর উল্লেখ করো।
পটমঞ্জরী, গুর্জরী, দেবক্রী, ভৈরবী।
- আংশিক লুপ্ত (২৩ নং চর্যা) চর্যাগীতিটির কবি কে?
ভুসুক পাদ।
- চর্যাকবিদের নামের সঙ্গে ‘পাদ’ শব্দের যোগ দেখা যায় কেন?
‘পাদ’ শব্দের অর্থ, পূজনীয়, যাঁর চরণ স্পর্শ করে শ্রদ্ধা জানানো যায়। সমকালে চর্যাকবিরা শিষ্য ভক্তমন্ডীর কাছে পূজনীয় আচার্য বা গুরু হিসেবে মর্যাদা পেয়েছেন।
তাই তাঁদের ভক্ত শিষ্যরা তাঁদের নামের সঙ্গে ‘পাদ’ শব্দটি যোগ করে দিতেন।
ভণ ধাতু ধরে ভণিতা দেবার রীতি বাংলায় প্রথম কোথায় পাওয়া যায়? চর্যাগীতিতে।
- অস্পষ্টতার জন্য চর্যার ভাষাকে কে ‘সন্ধ্যাভাষা’ বলে উল্লেখ করেছেন? হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
কোন্ বংশের রাজত্বকালে চর্যাপদগুলি লেখা? পাল বংশের রাজত্বকালে।
- নেপাল থেকে ‘চাচা সঙ্গীত’ গুলির কে সন্ধান পান? ড. আর্নল্ড বাকে।
- ‘নব চর্যাপদ’ কী?
১৯৬৩ সালে নেপাল থেকে ড. শশিভূষণ দাশগুপ্ত আরো ২৫০টি নতুন চর্যাগা আবিষ্কার করেন। সেগুলি থেকে তিনি ৯৮টি পদ নিয়ে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যাল থেকে ‘নবচর্যাপদ’ নামে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু আকস্মিকভাবে তাঁর মৃত ঘটে। পরে ১৯৮৯ সালে ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ‘নবচর্যাপ প্রকাশিত হয়।
‘চর্যা’ কথাটির অর্থ কী? যা আচরণীয়।
- চর্যাপদ নিয়ে কোন্ আধুনিক উপন্যাসটি লেখা হয়েছে? বাণী বসুর ‘মৈত্রেয় জাতক’। এছাড়া দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘কাহ্ন’।
- চর্যাপদে কোন্ ধর্মের কথা বলা হয়েছে? বৌদ্ধ সহজিয়া ধর্মের কথা বলা হয়েছে।
- চর্যাপদের প্রকৃত নাম কি? গ্রন্থটির টীকা কে কোন্ ভাষায় রচনা করেন? তিনি কতগুলি পদের টীকা রচনা করেছিলেন? চর্যাপদের প্রকৃত নাম ‘চর্যাগীতিকোষ’। মুনি দত্ত গ্রন্থটির টীকা ‘চর্যাগীতিকোষবৃত্তি’ সংস্কৃত ভাষায় রচনা করেন। তিনি পঞ্চাশটি পদের টীকা রচনা করেছিলেন।
- হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত চর্যাপদের পুথিটির মলাটে কি না লেখা ছিল? সৌ নামটি কোন্ নামের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল? পুথিটির প্রকৃত নাম কি? হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত চর্যাপদের পুথিটির মলাটে দেবনাগরী হরফে ‘চর্যাচর্য্যটীক নামটি লেখা ছিল।
পরবর্তীকালে আরোপিত ও প্রক্ষিপ্ত জ্ঞানে আবিষ্কর্তা ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ নামের দ্বারা সেটি প্রতিস্থাপন করেন।
চর্যাপদের তিব্বতী অনুবাদ আবিষ্কারের পর চর্যাপুথির প্রকৃত নাম জানা যায় ‘চর্যাগীতিকোষ’ মুনি দত্ত ‘চর্যাগীতিকোষবৃত্তি’ নামে তার টীকা রচনা করেন।
- বঙ্গসাহিত্যের প্রাচীনতম কাব্যটির নাম কি? কাব্যটি কি জাতীয় কাব্য – পদ না গীতি?
বঙ্গসাহিত্যের প্রচীনতম কাব্যটির নাম ‘চর্যাগীতিকোষবৃত্তি’।
সমিল জোড় পংক্তি বলে পরিচিত। চর্যাগুলি কয়েকটি পদের সমষ্টি মাত্র। সেই পদগুলিতে রাগ-তালের নির্দেশ ও ধর্মীয় তত্ত্ব সমন্বিত হওয়ায় তা সাধন রূপেই গীত হত। তাই চর্যাগুলি পদ হয়েও গীতি। চর্যাগীতিই চর্যাপদের চূড়ান্ত পরিচয়।
- চর্যাপদে জীবন জীবিকার পরিচয় দাও। চর্যাপদে মূলত অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের নানাবৃত্তি ও জীবনজীবিকার ছবি ফুটে উঠেছে। কৃষিকাজ, তাঁতবোনা, তুলোধোনা, শিকার করা, মাছধরা, খেয়া দেওয়া, চোলাই বানানো ইত্যাদি কাজ করে তারা জীবিকার্জন করতো। এছাড়াও মেয়েরা নাচগান ও রূপোজীবিনীর বৃত্তি গ্রহণ করতো।
- চর্যাপদের সঙ্গে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের কি যোগসূত্র মেলে? স্বাতন্ত্র্য – বা কি?
মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে পদ ও পাঁচালি দুই অঙ্গিকে রচিত হয়েছিল, চর্যাপদও পদাকারে রচিত। চর্যাপদের মতো রাগতালের নির্দেশ মধ্যযুগীয় সাহিত্যেও দেখা যায়। সুতরাং উভয় সাহিত্যই ভণিতাযুক্ত, গেয় সাহিত্য। ধর্ম নির্ভরতা উভয়ের ভিত্তি।
চর্যাপদ বৌদ্ধধর্ম নির্ভর, মধ্যযুগীয় সাহিত্য মূলত হিন্দু, গৌণত ইসলাম ধর্ম নির্ভর।