প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় বিদেশি সাহিত্যের গুরুত্ব 2024
উত্তর:- অতীতকালের মানুষের ব্যবহৃত সমস্ত দ্রব্য বা রচনা যা তাদের সঠিক
ইতিহাস জানতে আমাদের বিশেষ ভাবে সাহায্য করে, সেগুলিকে এককথায় ইতিহাসের উপাদান বা উপকরণ বলা হয়। বর্তমান যুগের ঐতিহাসিকগণ নানা বিচ্ছিন্ন সূত্র থেকে উপাদান সংগ্রহ করে ভারতের ইতিহাস রচনা করেছেন।
উপকরণের শ্রেণিবিভাগ: উপকরণ বা উপাদানগুলিকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথা- (ক) সাহিত্য (খ) লিপি (গ) মুদ্রা এবং (ঘ) স্থাপত্য ও ভাস্কর্য।
■ সাহিত্যগত উপকরণ: সাহিত্যগত উপকরণগুলিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (ক) দেশীয় সাহিত্য (খ) বিদেশি সাহিত্য।
Contents
- 1 ◆বিদেশি সাহিত্য:
- 2 (১) প্রাক-আলেকজান্ডার যুগের গ্রিক লেখক:
- 3 (২) আলেকজান্ডারের সহযোগীদের রচনা:
- 4 (৩) মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকা:
- 5 (৪) অজ্ঞাত পরিচিত গ্রিক নাবিক:
- 6 (৫) রোমান পণ্ডিত প্লিনি রোমান পণ্ডিত প্লিনর
- 7 (৬) চিনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন:
- 8 (৭) চিনা পরিব্রাজক
- 9 (৮) চিনা পরিব্রাজক
- 10 (৯) তিব্বতীয় ঐতিহাসিক লামা তারনাথ:
- 11 (১০) আরবীয় পর্যটক সুলেমান:
- 12 (১১) আরবীয় পর্যটক মাসুদি:
- 13 (১২) আরবীয় পর্যটক অল-বিরুণী:
- 14 • মূল্যায়ন:
◆বিদেশি সাহিত্য:
বিদেশি পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের বিবরণ থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বহু মূল্যবান তথ্য জানা যায়। বিদেশিদের বিবরণকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।
(১) প্রাক-আলেকজান্ডার যুগের গ্রিক লেখক:
প্রাক্-আলেকজান্ডার যুগে যেসব গ্রিক লেখক ভারত সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন তাদের কেউই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তা করেননি। ভারত সম্পর্কে প্রচলিত কাহিনী শুনে বা অপরের কাছ থেকে জেনে তারা তাদের ধারণা লিপিবদ্ধ করেছেন। এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত গ্রিক লেখকগণ হলেন হেরোেডটাস, টেসিয়াস প্রমুখ। হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনক বলা হয়। তিনি কখনো ভারতে না এলেও তার রচিত গ্রন্থ ‘Persare’ বা ‘ইতিহাসমালা’ থেকে আমরা পারসিকগণ কর্তৃক উত্তর-পশ্চিম ভারত আক্রমণ ও অধিকারের কথা জানতে পারি। টেসিয়াসের ‘ইন্ডিকা’ নামক গ্রন্থও সমকালীন ভারতের নানা তথ্যে সমৃদ্ধ।
(২) আলেকজান্ডারের সহযোগীদের রচনা:
আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ কালে তিনজন গ্রিক লেখক তার সঙ্গী ছিলেন। এরা হলেন নিয়ারকাস, ওনেসিহিটাস এবং অ্যারিসটোবুলাম। এদের রচিত বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে আলেকজান্ডারের ভারত অভিযান সম্পর্কে বহু তথ্য জানা যায়।
(৩) মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকা:
গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে ভারতে এসেছিলেন। তার লেখা ‘ইন্ডিকা’ গ্রন্থটি মৌর্য আমলে ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থার গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
(৪) অজ্ঞাত পরিচিত গ্রিক নাবিক:
খ্রিস্ট্রিয় প্রথম শতকে এক অজ্ঞাত পরিচিত গ্রিক নাবিকের ‘ভারত মহাসাগর ভ্রমণ’ গ্রন্থ থেকে প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন বন্দর ও বাণিজ্যকেন্দ্র সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়।
(৫) রোমান পণ্ডিত প্লিনি রোমান পণ্ডিত প্লিনর
‘প্রাকৃতিক ইতিহাস’ থেকে সমকালীন সমুদ্রপথ এবং ভারতের সঙ্গে রোম ও গ্রিসের ব্যবসাবাণিজ্য সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়।
(৬) চিনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন:
৩৯৯-৪২৪ খ্রিস্টাব্দে চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে ভারতে আসে। তিনি প্রায় ১৫ বছর ভারতে ছিলেন। তিনি উত্তরভারত পরিভ্রমণ করে একটি তথ্যপূর্ণ বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন।
(৭) চিনা পরিব্রাজক
হিউয়েন সাঙ ৬২৯-৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে ভারতে আসেন। তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল পরিভ্রমণ করে ‘সি-ইউ-কাই’ নামে এক গ্রন্থ রচনা করেন।
(৮) চিনা পরিব্রাজক
ইৎসিৎ সপ্তম শতকের শেষে ভারতে আসেন ইৎসিৎ। তিনি সেই সময়ের বৌদ্ধধর্মের বিবরণ লিখেছেন।
(৯) তিব্বতীয় ঐতিহাসিক লামা তারনাথ:
তিব্বতীয় ঐতিহাসিক লামা তারনাথ ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে তিব্বতী ভাষায় ‘ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস’ নামক গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি হর্ষবর্ধন ও শশাংক এবং পাল রাজাদের সম্পর্কে বহু তথ্য দিয়েছেন।
(১০) আরবীয় পর্যটক সুলেমান:
আরবীয় পর্যটক সুলেমান ভারতে আসেন পানরাজ দেবপালের আমলে। তার বিবরণী থেকে ভারতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়।
(১১) আরবীয় পর্যটক মাসুদি:
আরবীয় পর্যটক মাসুদি ভারতে আসেন মহীপালের রাজত্বকালে। তার বিবরণ থেকে মহীপালের ঘোড়া ও উট সম্পর্কে জানা যায়।
(১২) আরবীয় পর্যটক অল-বিরুণী:
আরবীয় পর্যটক অল-বিরুণী খ্রিস্ট্রিয় একাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুলতান মামুদের সঙ্গে ভারতে আসেন। তার লেখা ‘তহকিক-ই-হিন্দ’ বা ‘কিতাব-উল-হিন্দ’ তৎকালীন ভারতের ধর্ম, সমাজ,শিক্ষা, মানুষের আচার ব্যবহার, জ্যোতিষ ও আয়ুর্বেদ সম্বন্ধে বহু তথ্য পাওয়া যায়।
• মূল্যায়ন:
পরিশেষে একটি কথা বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য তা হল এইসব বিদেশি বিবরণী থেকে ইতিহাস রচনা করতে গেলে প্রথম থেকেই নিরপেক্ষতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে বাঁচতে হলে এই পন্থা অবলম্বন ছাড়া অন্য কোন পথ নেই।