প্রাচীন বা পুরা প্রস্তর যুগের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো 2024 | নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য pdf
উত্তর:- বিবর্তনের পথ ধরে জুরাসিক যুগ, তুষার যুগ প্রভৃতি অতিক্রম করে মানুষ এক সময় প্রস্তর যুগে এসে পৌঁছায়। আনুমানিক খ্রিসটপূর্ব ২,৬০,০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪,০০০ অব্দ পর্যন্ত সময়কালকে প্রস্তরযুগ হিসাবে ধরা হয়। প্রস্তরযুগকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- (ক) প্রাচীন বা পুরাপ্রস্তর যুগ (খ) মধ্যপ্রস্তর যুগ গ) নবপ্রস্তর যুগ।
Contents
■ প্রাচীন বা পুরা প্রস্তর যুগ:
ল্যাটিন ভাষায় Palaeolithic এর ইংরেজি প্রতিশব্দ Old Stone আর বাংলায় প্রাচীন বা পুরা প্রস্তর যুগ। এই যুগের বিস্তৃতি ছিল আনুমানিক ৫ লক্ষ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ অব্দ। ভারতের পাঞ্জাবের সোয়ান নদীর অববাহিকা, মাদ্রাজে প্রাচীন প্রস্তর যুগের বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া গেছে। ঐতিহাসিকরা অনুমান করেন নেগ্রিটো জাতির মানুষরাই হল ভারতের প্রাচীনতম অধিবাসী।
■ প্রাচীন বা পুরা প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য:
প্রাচীন বা পুরা প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ-
◆(১) পাথরের ব্যবহার:
প্রাচীন প্রস্তরযুগে মানুষ সর্বপ্রথম পাথরের ব্যবহার শেখে। এই যুগে মানুষ একটি পাথরকে অন্য পাথর দিয়ে ঠুকে হাতিয়ার তৈরি করতে শেখে। পাথরের হাতিয়ারগুলি ছিল অমসৃণ ও বিরাট। এই যুগে অন্যতম হাতিয়ার ছিল পাথরের তৈরি হাতকুঠার। এছাড়া পাথর দিয়ে তারা বর্শা, ছুরি, অন্যান্য হাতিয়ার এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করত।
◆(২) আশ্রয়স্থল:
প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের কোনো নির্দিষ্ট আশ্রয়স্থল ছিল না। তাদের জীবনযাত্রা ছিল যাযাবরের মতন। খদ্যের ঘাটতি দেখা দিলে এক স্থান ত্যাগ করে তারা অন্যস্থানে চলে যেত। সাময়িকভাবে থাকবার জন্য তারা গুহা ব্যবহার করত। অনেক সময় তারা গাছের ওপরও আশ্রয় নিত। অনেক সময় আবার পাথর এবং গাছের ডালপাতা দিয়েও তাঁরা আশ্রয় বানাত, যা দেখতে অনেকটা ঝুপড়ির মতো।
◆(৩) আগুনের ব্যবহার:
প্রাচীন প্রস্তরযুগের প্রথম দিকে আদিম মানব আগুন সংগ্রহ করে রাখত। গাছে গাছে ঘর্ষণের ফলে বনে যে আগুন জ্বলে ওঠে তা তারা সংগ্রহ করে রাখত। পরে পাথরকে পাথরের সঙ্গে ঠুকে আগুন জ্বালাতে শিখেছিল। উ
◆(৪) খাদ্য:
প্রাচীন প্রস্তর যুগে আদি মানব কৃষিকাজ জানত না। তারা ছিল খাদ্য সংগ্রাহক। তাদের প্রধান খাদ্য ছিল মাংস। এছাড়া গাছের ফলমূলও তাদের খাবারের তালিকাভুক্ত ছিল। অর্থাৎ তারা নিরামিষ ও আমিষ দু’ধরনের খাবারই খেত।
◆(৫) শিকার:
প্রাচীন প্রস্তর যুগে ঠাণ্ডা বাড়তে থাকায় জঙ্গলে আদি মানব কুড়োবার মতো কিছু আর পেল না। ইঁদুর, কাঠবেড়ালিও আর পাওয়া গেল না। যার ফলে আদি মানবদের পশু শিকারের দিকে নজর দিতে হয়েছিল। তারা দলবদ্ধভাবে শিকারের কাজ করত।
◆(৬) পোশাক পরিধান:
প্রাচীন প্রস্তর যুগের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল
আদি মানবদের পোষাক পরিধান। সেই সময়কার আদিমানব পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি পোশাক পরত। পাতলা হাড়ের তৈরি সূঁচ দিয়ে চামড়াকে সেলাই করে তারা পোশাক বানাত। পশুর নাড়ি ভুড়ি সুতো হিসাবে ব্যবহার করা হত।
◆(৭) সমাজবদ্ধ জীবন:
প্রাচীন প্রস্তর যুগে সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। সমাজে নারীদের ভূমিকা ও প্রাধান্য ছিল বেশি। সেই সময় মানুষ ছিল শত্রু পরিবেষ্টিত। তাই তারা সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করতো। ফলে আদি সমাজ গড়ে উঠেছিল।
◆(৮) শিল্পকলা:
প্রাচীন প্রস্তর যুগে মানুষের শিল্পী মনের পরিচয় পাওয়া যায় তাদের আঁকা গুহাচিত্র থেকে। গুহাচিত্রের মধ্যে আছে শিকার, নাচ ও গানের ছবি। তবে বেশিরভাগ ছবি শিকারের ছবি।
◆(৯) বাদ্যযন্ত্র:
প্রাচীন প্রস্তর যুগে কী ধরনের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হত তার কিছু নমুনা মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে। প্রধান বাদ্যযন্ত্র ছিল হাড়ের তৈরি পাইপ বা ভেঁপু। সেকালে ব্যবহৃত আরেকটি বাদ্যযন্ত্র ছিল বুলরোরার অর্থাৎ যে যন্ত্র থেকে ষাঁড়ের মতো গর্জন বেরোয়। বলগা হরিনের শিং দিয়ে এই যন্ত্রটি তৈরি করা হত। শিং থেকে আরেকটি বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা হত, তার নাম শিঙা।
◆(১০) সমাধি প্রথার সূচনা:
প্রাচীন প্রস্তর যুগে মৃতদেহ সমাধি দেওয়া হত। এই সময়কার কবরের নিদর্শনও আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রত্যেকটি সমাধিতে মৃতদেহের পাশে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র রাখা হত, যাতে মৃত ব্যক্তি কোনোকিছুরই অভাব বোধ না করে।