তুর্কি আক্রমণ-পূর্ব সাহিত্যের পরিচয় দাও
তুর্কি আক্রমণ-পূর্ব সাহিত্যের পরিচয় দাও
উত্তর: তুর্কি আক্রমণের পূর্বযুগে সংস্কৃত, অবহট্ট, অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি হলেও তার মধ্যে বাঙালী চেতনার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। হালের ‘গাহাসও সঈ’ প্রাকৃতে লেখা কাব্য, বিষয় প্রেম। কাব্যের ৭০০ কবিতাকে সাত ভাগ করে পল্লীগ্রামের জীবনযাত্রা প্রকাশ পেয়েছে। রাধা চরিত্রের প্রথম খোঁজ এই কাব্যেই পাওয়া যায়।
ধোয়ীর ‘পবনদূত’ লক্ষ্মণসেনের রাজত্বকালে লেখা। ধোয়ী পঞ্চরত্বের একজন। কালিদাসের ‘মেঘদূত’ কাব্যকে অনুসরণ করে মন্দাক্রান্তা ছন্দে ১০৪টি শ্লোক লক্ষ্মণ সেনের প্রশস্তি করে লেখা। গোবর্দ্ধন আচার্য ‘আর্যাসপ্তশী’ নামে একটি প্রেমকাব্য লেখেন। হালের গাহাসওসঈ-এর অনুসরণে লেখা এই গ্রন্থ। দেবদেবীর স্তুতি ও প্রায় সাতশো শ্লোকসম্পন্ন এই কাব্য।
‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’ প্রকৃিত ভাষায় প্রকীর্ণ কবিতাবলী। পিঙ্গলাচার্যের ছন্দ বিষয়ক গ্রন্থ এটি। এতে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা দেখা যায়। অনেক শ্লোক বাঙালীর বলে মনে হয়।
শ্রীধর দাসের ‘সদুক্তিকর্ণামৃত’ (১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে) পাঁচ প্রবাহে বিভক্ত। ৪৮৫ জন কবির ২৩৭০টি পদ সংকলিত হয়েছে। কালিদাস, ভাস, শরণ, রাজশেখর, ধোয়ী, উমাপতি, গোবর্ধন প্রমুখ কবির পদ স্থান পেয়েছে। প্রকৃতি, যুদ্ধ, প্রেম পদগুলিতে স্থান পেয়েছে। অমর প্রবাহ, চাটু প্রবাহ, অপদেশ প্রবাহ, শৃঙ্গার প্রবাহ, উচ্চাবচ প্রবাহ-তে কবিতাগুলি বিভক্ত।
‘[‘গীতগোবিন্দ’ কবি জয়দেবের লেখা রাধাকৃষ্ণের অমর প্রেমকথা। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলাকে প্রাকৃত-অপ্রাকৃতের সমন্বয়ে এক নতুন ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছেন। দ্বাদশ অধ্যায়ে লেখা আখ্যায়িকামূলক কাব্যটিতে আখ্যান, নাটকীয়তা, সঙ্গীত আছে। শ্রীচৈতন্যর পছন্দের কাব্য এটি।
- W. Thomas-এর সম্পাদিত ‘কবীন্দ্রবচন সমুচ্চয়’ খণ্ডিত ছিল; পরে সম্পূর্ণ আকারে ‘সুভাষিত রত্নকোষ’ নামে সংকলিত হয়। কালিদাস, ভবভূতি, শ্রীধর প্রমুখ প্রেম, প্রকৃতি, যুদ্ধ বিষয় নিয়ে এতে লিখেছেন। ১৯৫৭ খ্রীষ্টাব্দে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। আড়াইশো জনের কাছাকাছি লেখকের সাতশো আটত্রিশটি শ্লোক আছে এবং পদগুলি আদিরস সম্পন্ন।
হলায়ুধ মিশ্রের নাম গ্রন্থে পাওয়া গেলেও অনেকে ‘সেক্ শুভদয়ার’ কবি বলে তাকে মানেন না। এটি গদ্য-পদ্য মিশ্রিত চম্পু কাব্য পঁচিশটি অধ্যায়বিশিষ্ট গল্প। হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের কথা আছে এই গ্রন্থে।
সপ্তম- দ্বাদশ শতাব্দীর শৌরসেনী অপভ্রংশে লেখা কৃষ্ণাচার্য, সাবারুহ বদ্রের এবং সরহপাদের ‘দোহাকোষ’ পাওয়া যায়। রচয়িতাঁরা বেশির ভাগ বাঙালী। কারণ ‘বাঙালী জীবনচর্চা এর মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়।
বাংলা সাহিত্যের আদিযুগের প্রাচীন নিদর্শন চর্যাগীতি। পদগুলির মধ্যে অষ্টম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর বাংলা ভাষার পরিচয় মেলে। ১৯০৭ খ্রীষ্টাব্দে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে কয়েকটা পুঁথির সঙ্গে ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ পুঁথিটি আবিষ্কার করেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, সরই অবাককাচার্যের দোহা ও ডাকার্ণব এক করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নিদর্শন মনে করে ‘হাজার বছরের পুরোনো বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোঁহা’ শিরোনামে ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশ করেন। যা চর্যাপদ নামেই পরিচিত। সন্ধ্যাভাষায় লেখা চর্যাপদ। কতক আলো, কতক অন্ধকার। চর্যাপদ আদি বা প্রাচীন বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম পুঁথি।
উত্তর: তুর্কি আক্রমণের পূর্বযুগে সংস্কৃত, অবহট্ট, অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি হলেও তার মধ্যে বাঙালী চেতনার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। হালের ‘গাহাসও সঈ’ প্রাকৃতে লেখা কাব্য, বিষয় প্রেম। কাব্যের ৭০০ কবিতাকে সাত ভাগ করে পল্লীগ্রামের জীবনযাত্রা প্রকাশ পেয়েছে। রাধা চরিত্রের প্রথম খোঁজ এই কাব্যেই পাওয়া যায়।
ধোয়ীর ‘পবনদূত’ লক্ষ্মণসেনের রাজত্বকালে লেখা। ধোয়ী পঞ্চরত্বের একজন। কালিদাসের ‘মেঘদূত’ কাব্যকে অনুসরণ করে মন্দাক্রান্তা ছন্দে ১০৪টি শ্লোক লক্ষ্মণ সেনের প্রশস্তি করে লেখা। গোবর্দ্ধন আচার্য ‘আর্যাসপ্তশী’ নামে একটি প্রেমকাব্য লেখেন। হালের গাহাসওসঈ-এর অনুসরণে লেখা এই গ্রন্থ। দেবদেবীর স্তুতি ও প্রায় সাতশো শ্লোকসম্পন্ন এই কাব্য।
‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’ প্রকৃিত ভাষায় প্রকীর্ণ কবিতাবলী। পিঙ্গলাচার্যের ছন্দ বিষয়ক গ্রন্থ এটি। এতে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা দেখা যায়। অনেক শ্লোক বাঙালীর বলে মনে হয়।
শ্রীধর দাসের ‘সদুক্তিকর্ণামৃত’ (১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে) পাঁচ প্রবাহে বিভক্ত। ৪৮৫ জন কবির ২৩৭০টি পদ সংকলিত হয়েছে। কালিদাস, ভাস, শরণ, রাজশেখর, ধোয়ী, উমাপতি, গোবর্ধন প্রমুখ কবির পদ স্থান পেয়েছে। প্রকৃতি, যুদ্ধ, প্রেম পদগুলিতে স্থান পেয়েছে। অমর প্রবাহ, চাটু প্রবাহ, অপদেশ প্রবাহ, শৃঙ্গার প্রবাহ, উচ্চাবচ প্রবাহ-তে কবিতাগুলি বিভক্ত।
‘[‘গীতগোবিন্দ’ কবি জয়দেবের লেখা রাধাকৃষ্ণের অমর প্রেমকথা। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলাকে প্রাকৃত-অপ্রাকৃতের সমন্বয়ে এক নতুন ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছেন। দ্বাদশ অধ্যায়ে লেখা আখ্যায়িকামূলক কাব্যটিতে আখ্যান, নাটকীয়তা, সঙ্গীত আছে। শ্রীচৈতন্যর পছন্দের কাব্য এটি।
- W. Thomas-এর সম্পাদিত ‘কবীন্দ্রবচন সমুচ্চয়’ খণ্ডিত ছিল; পরে সম্পূর্ণ আকারে ‘সুভাষিত রত্নকোষ’ নামে সংকলিত হয়। কালিদাস, ভবভূতি, শ্রীধর প্রমুখ প্রেম, প্রকৃতি, যুদ্ধ বিষয় নিয়ে এতে লিখেছেন। ১৯৫৭ খ্রীষ্টাব্দে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। আড়াইশো জনের কাছাকাছি লেখকের সাতশো আটত্রিশটি শ্লোক আছে এবং পদগুলি আদিরস সম্পন্ন।
হলায়ুধ মিশ্রের নাম গ্রন্থে পাওয়া গেলেও অনেকে ‘সেক্ শুভদয়ার’ কবি বলে তাকে মানেন না। এটি গদ্য-পদ্য মিশ্রিত চম্পু কাব্য পঁচিশটি অধ্যায়বিশিষ্ট গল্প। হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের কথা আছে এই গ্রন্থে।
সপ্তম- দ্বাদশ শতাব্দীর শৌরসেনী অপভ্রংশে লেখা কৃষ্ণাচার্য, সাবারুহ বদ্রের এবং সরহপাদের ‘দোহাকোষ’ পাওয়া যায়। রচয়িতাঁরা বেশির ভাগ বাঙালী। কারণ ‘বাঙালী জীবনচর্চা এর মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়।
বাংলা সাহিত্যের আদিযুগের প্রাচীন নিদর্শন চর্যাগীতি। পদগুলির মধ্যে অষ্টম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর বাংলা ভাষার পরিচয় মেলে। ১৯০৭ খ্রীষ্টাব্দে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে কয়েকটা পুঁথির সঙ্গে ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ পুঁথিটি আবিষ্কার করেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, সরই অবাককাচার্যের দোহা ও ডাকার্ণব এক করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নিদর্শন মনে করে ‘হাজার বছরের পুরোনো বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোঁহা’ শিরোনামে ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশ করেন। যা চর্যাপদ নামেই পরিচিত। সন্ধ্যাভাষায় লেখা চর্যাপদ। কতক আলো, কতক অন্ধকার। চর্যাপদ আদি বা প্রাচীন বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম পুঁথি।