টীকা লেখো: সন্ধ্যা ভাষা।
উত্তর: দশম দ্বাদশ শতাব্দীতে লেখা চর্যাপদ। তবে অনেকে অষ্টম দ্বাদশ শতক মনে করে থাকেন। বাংলা ভাষার প্রাচীন সাহিত্যিক নিদর্শন চর্যাপদ। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ খ্রীষ্টাব্দে নেপালের রাজদরবারে থেকে পুঁথিটি আবিষ্কার করেন। ২৩জন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য, লুইপাদ, ভুসুকুপাদ, কাহ্নপাদ, কুদুরীপাদ প্রমুখ পদগুলি লেখেন। কাহ্নপাদ সবচেয়ে বেশি ১৩টি পদ লেখেন।
চর্যাগীতিতে বৌদ্ধ সহজিয়া সাধকদের অধ্যাত্মতত্ত্ব, সাধনতত্ত্ব বিষয়ক গান আছে। পদকর্তারা সকলের বোধগম্য করে লেখেন নি। রূপক, উপমা, উৎপ্রেক্ষার সাহায্যে বক্তব্যগুলিকে এক আলো-আঁধারি অবস্থায় প্রকাশ করেছেন। এই পদগুলির বাহ্য অর্থ ও গূঢ়ার্থ ভিন্ন। এরূপ ভাষা বৌদ্ধ সাধক ছাড়া বুঝতে পারে না। চর্যার টীকাকার মুনি দত্ত এইরূপ ভাষাকে সন্ধ্যাভাষা বা সন্ধ্যারীতি বলেছেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় বলেছেন, ‘সন্ধ্যাভাষার মানে আলো-আঁধারি ভাষা, কতক আলো কতক অন্ধকার। খানিক বুঝা যায়
খানিক বুঝা যায় না।’ অনেকে লিপিকর প্রমাদ ভেবেছেন। সম-ধা ধাতু থেকে এই সন্ধ্যা। বানির উৎপত্তি। ব্যুৎপত্তি অনুযায়ী বলা যায়, সন্ধ্যা ভাষা বা বচনের অর্থ যে ভাষা সম্পূর্ণরূপে গূঢ় থাকে অর্থাৎ বলা যায় সাংকেতিক ভাষা। ধর্মচর্যার গোপনীয়তার প্রয়োজনে সাধকরা সাংকেতিক ভাষায় নিজ গোষ্ঠীর মধ্যে কথা, তত্ত্বতালাশ করতেন। চর্যার পদকর্তারা গুহ্য সাধনের তত্ত্ব বাইরে প্রকাশ না করার বিষয়ে সতর্ক থাকতেন। ওহাত্ব রক্ষার জন্য সন্ধ্যা ভাষা প্রয়োগ করতেন। বিভিন্ন তন্ত্র বিষয়ক গ্রন্থেই এরূপ আলো-আঁধারি ভাষা ব্যবহার করা হয় যাতে কেউ সেটা না জানতে পারে। চর্যাকাররা তন্ত্রনির্ভর ছিলেন বলেই এরূপ সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করেছেন। তাই এর নাম
সন্ধ্যাভাষা। যেমন-
‘উঁচা উঁচা পাবত তর্হি বসই সবরী বালী মোরঙ্গি পীচ্ছ, পরহিন সবরী পিবত গুঞ্জরী মালী।’