টীকা লেখো: কৃষ্ণাচার্য (কাহ্ন পা)
উত্তর: মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ড. বিনয়ঘোষ ভট্টাচার্য, ড. মহম্মদ শহীদুল্লাহ, রাহুল সাংকৃত্যায়ন ও অধ্যাপক সুখময় মুখোপাধ্যায় তিব্বতী ভাষার নানা গ্রন্থ অবলম্বনে চর্যাকারদের আবির্ভাবকাল ও পরিচয় নিরূপণের চেষ্টা করেছেন। মূল গানে ও টীকায় পদকর্তার নাম যেভাবে উল্লেখিত হয়েছে তাতে মোট ২৩ জন কবির সন্ধান পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি গান পাওয়া গিয়েছে কাহ্ন ভনিতায়। তবে কাহ্ন নামাঙ্কিত সব গানই যে এক ব্যক্তির রচনা নয়, একথা অনুমানের সঙ্গত কারণ আছে। ড. সুকুমার সেন অন্তত দুজন কাহ্নের অস্তিত্ব অনুমান করেছেন।
কাহ্ন পার জন্ম উড়িষ্যায়। তিনি পাহাড়পুরের সোমপুরী বিহারে বাস করতেন। কাহ্ন পা- ‘দোহাকোষ’ ও তেরোটি চর্যাপদ ছাড়াও ‘শ্রীহে বজ্র পঞ্জিকা যোগ রত্নমালা’-র রচয়িতা। ১২০০ খ্রিস্টাব্দ এর লিপিকাল হিসাবে ধরা হয়। কাহ্ন পা-র শুরু জালন্ধরী পা। তাঁর গুরু ইন্দ্রভূতি। কাহ্ন পা গোপীচাঁদের সমসাময়িক; সাত শতকের শেষে, ধর্মপালের (৭৭০ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসন আরোহণ করেন) নির্মিত সোমপুরী বিহারের বাসিন্দা ছিলেন। সুতরাং এদিক থেকে বলা যায় কাহ্ন পা অষ্টম শতকে বর্তমান ছিলেন।
কাহ্নপা বা কৃষ্ণ পাদ বা কৃষ্ণাচার্য পাদ বা কৃষ্ণবজ্রপাদ অভিন্ন ব্যক্তি। তিনি দেব পালের সময় বর্তমান ছিলেন। জন্মস্থান কর্ণাট। বিহারে, বঙ্গদেশে (সোমপুরী বিহারে) বসবাস করেছেন। তিনি বর্ণে ব্রাহ্মণ, ভিক্ষু ও সিদ্ধ। তাঁর রচিত গ্রন্থ ‘মহাটুচন’, ‘বসন্ততিলক’, ‘অসম্বন্ধদৃষ্টি’, ‘ব্রজগীতি’ ও ‘দোহাকোষ’। – ‘গীতিকা’,
কাহ্ন পা বা কৃষ্ণাচার্যের জীবৎকাল নয় শতকের মধ্য ও শেষভাগ। গ্রন্থে আছে ইনি দেবপালের রাজত্বকালে (৮০৬-৪৯ খ্রি:) পণ্ডিত ভিক্ষু নামে বিখ্যাত ছিলেন। আর ওইসময়ে সোমপুরী পাহাড়ে বাস করতেন। কাহ্ন, কাজু, কাহ্নি, কাহিলা নামে তাঁর ভনিতা মেলে। মাত্র একস্থানে নামান্তর দেখা যায় ‘বিরুআ’। একটিতে গুরু জালন্ধরী পা’র কথা আছে। কাহ্ন কাপালিক, যোগী, নাঙ্গা বলে ভনিতায় আত্মপরিচয় দিয়েছেন। নাথসাধনার ঐতিহ্যে কাহ্ন জালন্ধরী বা হাড়ি পাঁর শিষ্য। তিব্বতী ঐতিহ্যে কৃষ্ণপাদ যোগীশ্বর আচার্য ও মণ্ডলাচার্য। কৃষ্ণপাদের নামের রচনাগুলি একজনের নয়, অন্তত দুজন কাহ্নের অস্তিত্ব অনুমিত হয়। অপর একজন কাহ্ন জালন্ধরী পার শিষ্য যার নামান্তর ছিল ‘বিরুআ’। তিনি নাঙ্গা, কাপালিক যোগী এবং তার নামে ডোমনী প্রেম বর্ণিত হয়েছে। তাঁর রচনা ১০, ১১, ১৮, ১৯, ৩৬ ও ৪২ নং পদ। অন্য কাহ্ন’র রচনায় জ্ঞানের উপদেশ বেশি। তাঁর রচনা সাতটি ৭, ৯, ১২, ১৩, ২৪, ৪০ ও ৪৫।