চর্যাপদের আবিষ্কার ও প্রকাশকাল বিবৃত করো। চর্যায় সমাজচিত্রের পরিচয় দাও।
পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী 1907 সালে নেপালের রাজ- সবার থেকে চর্যাগীতির পুঁথি আবিষ্কার করেন।
1916 সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ থেকে হাজার বছরের পুরান বাঙ্গালা এষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা’ নামে সংগৃহীত পুমিগুলি কিাশ লাভ করে।
সাহিত্য মূল্য: চর্যাপদ রচয়িতারা তাঁদের নিজেদের রচনাকে গূঢ়ার্থ রচনা বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু যতই গূঢ়ার্থ পূর্ণ হোক তাঁরা তার প্রকাশ করতে গিয়ে পরিচিত জীবনের বাস্তব রূপক প্রতীকই ব্যবহার করেছেন। তাই চর্যার তত্ত্বকথা নীরস হয়ে ওঠেনি। আবার অনেক জায়গায় ও ব্যাঞ্জনাধর্মিতা প্রকাশ পেয়েছে। ভুসুকপাদের পদটি ব্যাধের দ্বারা আক্রান্ত হরিণ ও তার সঙ্গিনীর
■ বিরহকাতর চিত্রটি অপূর্ব ব্যঞ্জনায় আভাষিত হয়েছে।
“তিন ন চ্ছপই হরিণা পিবই না পাণী। হরিণা হরিণীর নিলঅ জাণী।”
এখানে এই ব্যঞ্জনার মধ্য দিয়ে কেবলমাত্র হরিণীর হৃদয়ের সন্ধান পাওয়া যায় না তাবৎ বিরহী মানুষের হৃদয়ের কাতরোক্তিও ফুটে উঠেছে।
প্রকৃতির পটভূমিকার রোমান্টিকতার প্রকাশ পাওয়া যায় শবরপাদের ৫০নং সংখ্যায়।
“হেরি যে মোর তইলা বায়ী মঃসমে সমতুলা। যুকর এসে সে কপাসু ফুটিলা।। তইলা বাড়ির পাসের জোহ্ন বাড়ি ভাত্রলা। ফিটেলি অন্ধারী যে আকাশ ফুলিয়া।। কুঙ্গুচিনা পাকেলা রে শবরাশবরী মাতেলা। অনুদিন সবরো কিল্লিন চেবই মহাসুহে ভেলা।।”
নীল আকাশের নীচে একটি বাড়ি। বাড়ীর পাশে শুভ্র কার্পাস ফুল ফুটেছে। এ বাড়ির পাশে দেখা যায় জ্যোৎস্না ধোওয়া আর একটি বাড়ি। আঁধার ঘুচল। আকাশে তারা ফুল ফুটল। কুঙ্গুচিন পাকল। তার তৈরি হাঁড়িতে খেয়ে শবর শবরী মাতাল হল। সুখে আনন্দে দিন কাটালো। প্রায় সমস্ত কবিতার মধ্যে কাব্যধর্মিতা ও গীতিময়তা প্রকাশ পেয়েছে। এমনি কাব্যময়তার প্রকাশ ঘটেছে চর্যাপদে-
“উচা উচা পাবত তহি বসই সবরী বালী। মোরঙ্গিপীচ্ছ পরহিন সবরী গিবত গুঞ্জরীমালী। উমত সবরো পাগল সবরো মা করগুল গুহাজ তোহঁরি। নিঅ ঘরিনী নামে সহজ সুন্দরী নানা তরুবর মৌলিল রে গঅগত লাভোলী ভালী একেলী সবরী এ বন হিন্ডই কুর্ণকুণ্ডলবজ্রধারী।।” এছাড়া গৃহবধূর বেদনাও মর্মস্পর্শী ভাবে ফুটে উঠেছে। দরিদ্র বলে তার কোনও প্রতিবেশী নেই। ঘরে নিদারুণ দারিদ্র্য, হাঁড়িতে ভাত নেই কিন্তু প্রতিদিনই অতিথি আসে। “টালত মোর ঘর নাহি পড়বেষী। হাঁড়িতে ভাত নাঁহি নিতি আবেশী।।” এমনভাবে চর্যাপদের নানান পদে সাধারণ মানুষের কথাই ফুটে উঠেছে। চর্যাপদে নানান অলংকার পরিস্ফুট হয়েছে। যেমন-উপমা, রূপক, উৎপ্রেক্ষা, শ্লেষ, অতিশয়োক্তি প্রভৃতি অর্থালঙ্কার ও অনুপ্রাসের মতো শব্দালঙ্কার। চর্যাপদের মধ্যে কোথাও কোথাও প্রবাদ প্রবচন দেখা যায়। এই ভাবে ছন্দ, অলংকার, প্রবাদ প্রবচন সব মিলিয়ে চর্যাপদের কাব্যসৌন্দর্য এক অনপম